রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

কলকাতায় ঈদ কেনাকাটায় বাংলাদেশিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি ব্যাংকে উচ্চ পদে চাকরি করেন জাহাঙ্গীর হোসেন। আফরোজা হোসেন একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির উচ্চ পদে আসীন। করপোরেট জগতের সুখী এই দম্পতির এক সন্তান। রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্র। তারা থাকেন ধানমন্ডিতে। বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি থাকেন রাজশাহীতে। এবারের ঈদে নিজেদের এবং পরিবার-পরিজনের প্রায় সব কেনাকাটাই করেছেন কলকাতার বিভিন্ন শপিং মল থেকে। এমনকি আতর, টুপি আর জায়নামাজও কিনেছেন কলকাতা থেকেই। তাও আবার ২০ রোজার আগেই শেষ করেছেন কেনাকাটা। ঈদের দিনটা বাবা-মা আর শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কাটিয়ে পরদিন উড়াল দেবেন সিঙ্গাপুর। এমন শত শত পরিবার এখন ঢাকা ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় ঈদ শপিং করতে যান অহরহ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে ভোগ এবং বিলাসিতার মাত্রা বাড়ছে। যা দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করছে।

ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস সূত্র জানায়, অন্য বছরের তুলনায় এ বছরের শেষ তিন মাসে যে সংখ্যক বাংলাদেশি ভারত সফর করেছেন তা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি এবং গত তিন মাসে যারা গেছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই শপিং করতে গেছেন। অবশ্য চিকিৎসাসেবার জন্য ভারত গেছেন এমন বাংলাদেশির সংখ্যাও অনেক। তবে যারা চিকিৎসা নিতে বা ঘুরতে যান তারাও দেশে ফেরার আগে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের কাপড়-চোপড়, ঘড়ি, জুতা, কসমেটিকস, চামড়াজাত ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র কিনে তবেই দেশে ফেরেন। এ তালিকায় শুধু বিত্তশালীরাই নয়, মধ্যবিত্তদের মধ্যেও অনেকেই এখন দেশের বাইরে শপিং করতে যাচ্ছেন অহরহ। বিশেষ করে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করায় মানুষ এখন হরহামেশাই ভারত সফরে কেনাকাটা, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে ভারতীয় ভিসায় ই-টোকেন পদ্ধতি তোলার কারণে সহজ হয়ে গেছে ভারতের ভিসা পাওয়া। ফলে চিকিৎসা, কেনাকাটা, ব্যবসার জন্য এখন দেশ থেকে ভারতে যাওয়ার হার অনেক বেড়েছে। আর ঈদ সামনে রেখে শুধু কেনাকাটার জন্য এখন ভারতে যাচ্ছেন এমন লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ১২ থেকে ১৮ জুন বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে কলকাতায় গেছেন ৩১,৩০০ জন এবং ২৬,৬০০ জন একই সময়ে কলকাতা থেকে দেশে এসেছেন। যা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এতে অনুমান করা যায় বাংলাদেশি বিত্তশালীরা এ বছর কলকাতা ছাড়াও সে দেশের বিভিন্ন শহর থেকে ঈদের কেনাকাটা করেছেন। দূতাবাসের তথ্যমতে, এখনো ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছেন কলকাতায়। যারা শপিং, ভ্রমণ কিংবা চিকিৎসার জন্য ভিসা করিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অভিজাত বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেট, গাউছিয়া, ইস্টার্ন প্লাজা, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিসহ ঢাকার নতুন পুরনো শপিং মলগুলোর পাশাপাশি মানুষ এখন দেশের বাইরে গিয়ে ঈদ শপিং কেনাকাটাকে নিজেদের নতুন অনুসঙ্গ মনে করে। এ ছাড়া চাকরি বা ব্যবসার কাজে প্রচুরসংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছেন ভারতে। তারা তাদের পরিবার-পরিজনসহ আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ঈদ কেনাকাটা করে দেশে ফেরেন ঈদ উদযাপন করতে। এদিকে ক্রেতারা বলছেন, ভারতীয় কাপড় এবং চামড়াজাত পণ্যের দাম বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। মানও অনেক ভালো। ফলে দেশীয় নামিদামি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি তারা এখন ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাপড়-চোপড় এবং চামড়াজাত পণ্যকে নিজেদের পছন্দে এগিয়ে রাখছেন। তবে বাংলাদেশিদের থেকে এ বছর কী পরিমাণ অর্থের কেনাকাটা হয়েছে কলকাতায়, তা এখন নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ খবর