সোমবার, ৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বন্যায় দুর্ভোগ উত্তর-পূর্বের চার জেলায়

বিপদসীমার উপরে তিস্তা, পদ্মায় ব্যাপক ভাঙন

প্রতিদিন ডেস্ক

বন্যায় দুর্ভোগ উত্তর-পূর্বের চার জেলায়

ভারি বর্ষণ ও উজানে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এরই মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে। এতে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় লালমনিরহাটসহ কয়েক স্থানে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর ভাঙনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। সিলেটে কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ছয় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ :

লালমনিরহাট : ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানি পয়েন্টে গতকাল পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গুড্ডিমারী ইউনিয়নে অবস্থিত তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহের বিষয়টি নিশ্চিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রশীদ জানান, গতকাল তিস্তার পানি আরও বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দ্রুত পানি অপসারণের জন্য তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। পানি বাড়ায় তিস্তা পাড়ের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে জেলার ১৫ হাজার চরবাসী পানিবন্দী রয়েছে।

আরেকটি সূত্র জানায়, তিস্তার প্রচণ্ড পানির চাপে শনিবার রাতে হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী এলাকার দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যায়। এতে প্লাবিত হয়েছে দুটি গ্রামের শতাধিক পরিবার। এ কারণে আশপাশের এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তিস্তা পাড়ে বসবাসকারী অনেকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছে। এলাকাবাসী ও ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গুড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকার কয়েকটি গ্রামে তিস্তার পানি ঢুকে কয়েকশ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি উপজেলার তিস্তা চর বেষ্টিত ১৫ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আমন বীজতলাসহ কিছু কিছু এলাকায় সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। অপরদিকে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার চরখড়িবাড়ী ও খালিশা চাপানী এলাকার কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ভারত থেকে পানি আসায় তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। যে কারণে তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মনিটর করা হচ্ছে। পানি আরও বাড়তে পারে।

নীলফামারী : চলতি বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধির ফলে আতঙ্কে পড়েছে তিস্তা পাড়ের কয়েক হাজার মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে চর এলাকায় বসবাসকারীরা। নদীবেষ্টিত ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশা চাপানী, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, ঝুনাগাছ চাপানী এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুণ্ডা, ধর্মপাল, ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে তিস্তার পানি। ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন জানান, দুই দিনের পানিতে চর এলাকাগুলো তলিয়ে গেছে। সেখানকার বসবাস করা মানুষ এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে।

সিলেট : ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি এলাকায় টানা বর্ষণে সিলেটের কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও বাজার। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ছয় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুশিয়ারা তীরবর্তী ছয়টি ও ধলাই তীরবর্তী একটি উপজেলার অধিকাংশ রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা সদরও তলিয়ে গেছে। ফলে প্রশাসনিক কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। দুই উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় চিকিৎসাসেবা নিতে আসা লোকজনকে পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। কুশিয়ারা নদীর পানি না কমায় জেলার বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও ফেঞ্চুগঞ্জে দেখা দিয়েছে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা। টানা বর্ষণ ও ভারতের পাহাড়ি এলাকা থেকে নেমে আসা ঢলে এসব উপজেলার কোথাও এক মাস ধরে, কোথাও দুই সপ্তাহ ধরে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে সিলেটের ১৭৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল। বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

সরেজমিন ফেঞ্চুগঞ্জ গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের বেশির ভাগ জায়গাই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের অধিকাংশ দোকানপাটে পানি উঠেছে। ব্যবসায়ীরা মাচা বেঁধে দোকানের ভিতর মালপত্র রেখেছেন। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কায় অনেকে মালপত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। ব্যবসায়ী লিটন মিয়া জানান, প্রায় ২০ দিন ধরে তার দোকানে পানি জমে আছে। বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট ও রাস্তা পানিতে ডুবে যাওয়ায় ক্রেতারাও বাজারে আসতে পারছেন না। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদর সংলগ্ন পিটাইটিকর গ্রামের শফিকুর রহমান জানান, তিন সপ্তাহ ধরে গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় থাকলেও সরকারি ত্রাণ পৌঁছায়নি। এমনকি সরকারি কোনো কর্মকর্তাও এই বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেননি। ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম মুরাদ জানান, তার ইউনিয়নের বন্যার্তদের জন্য দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রের বন্যার্তদের মাঝে কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ জানান, বন্যার পানি না কমায় পানিবন্দী  অবস্থায় অফিস করতে হচ্ছে। এতে উপজেলার কর্মকর্তারা এবং সেবাগ্রহীতারাও দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন। বালাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মুনিম বলেন, ‘রাস্তাঘাট ও ইউপি পরিষদ কার্যালয় তলিয়ে যাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সেবা প্রদান করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ইউপি পরিষদ কার্যালয়ে আসছেন না। এদিকে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ এখন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে অল্প সংখ্যক মানুষ ত্রাণ পেলেও সিংহভাগ মানুষের কাছেই ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। ফলে এসব মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগে। কিছু এলাকায় ত্রাণের চাল পৌঁছালেও রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে বন্যার্তদের। তারা ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার প্রদানের দাবি করছেন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলা বন্যাকবলিত। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বন্যার্তদের জন্য ১২৮ মেট্রিক টন চাল ও নগদ প্রায় তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসন সূত্র বলছে, গতকাল সিলেট জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জানানো হয়, বন্যার কারণে সিলেটের ১৭৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তার মধ্যে ১৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বন্যায় নষ্ট হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর আউশ ও আমনের ফসল। এ ছাড়া বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৮৯টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

শরীয়তপুর : পদ্মার ভাঙনে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের তিন শতাধিক ঘরবাড়ি, জমি, মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল, সেতু কালভার্ট ও পাকা রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকির মুখে রয়েছে হাজার হাজার একর জমি, শত শত ঘরবাড়ি, মসজিদ মাদ্রাসা ও রাস্তাঘাট। ভাঙনে ভিটেমাটি ও সহায়-সম্বল হারিয়ে শত শত মানুষ উঁচু জমিতে বা রাস্তার পাশে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, কেবল নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর এলাকার আট কিলোমিটার এলাকায় পদ্মার বাঁধ রয়েছে। বাকি এলাকা এখনো অরক্ষিত। জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন বেপারি বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষার শুরুতেই পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ১০ দিনে নড়িয়ার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি, শেহের আলী মাদবরকান্দি, চেরাগ আলী মাদবর কান্দি ও জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর বেপারি কান্দি, ইয়াকুব বেপারি কান্দি, আইন উদ্দিন  বেপারি কান্দি, মমিন খালাসী কান্দি, মাদবর কান্দি, ইউসুফ বেপারি কান্দি, বিলাসপুর ইউনিয়নের কাজিয়ারচরসহ তিনটি ইউনিয়নের তিন শতাধিক ঘরবাড়ি, জমিজমা, মসজিদ মাদ্রাসা পাকা রাস্তা, বড় বড় সেতু ও স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া কালু বেপারি কান্দি স্কুল ও কলেজ, কাইয়ুম খার বাজার, ইয়াকুব মাদবর কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

মৌলভীবাজার : গেল বোরো মৌসুমে অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাকালুকি হাওর পাড়ের লক্ষাধিক মানুষ। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম। বাড়িঘর ছেড়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পেয়ে কষ্টের মধ্যে রয়েছেন দুর্গত মানুষ।  সরেজমিন দেখা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পৌরসভা এলাকার বিহালা, সোনাপুর, বিছরাকান্দি এলাকায় মানুষের ঘরে ঘরে হাঁটুপানি। এ ছাড়া উপজেলার বরমচাল, ভাটেরা, কাদিপুর ও জয়চন্ডি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দী রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ও সদর ইউনিয়নের অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ রয়েছে পানিবন্দী। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় স্কুল-মাদ্রাসায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার কোনো আশ্রয় না থাকায় আসবাবপত্র ও গবাদিপশু নিয়ে উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছে অনেক মানুষ। বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর সংলগ্ন বর্ণি, তালিমপুর, সুজানগর ও দাসেরবাজার ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার অন্তত ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ রয়েছে পানিবন্দী। এর মধ্যে সুজানগর ইউনিয়নের দশঘরি, রাঙ্গিনগর, বাড্ডা, ঝগড়ি, পাটনা, ভোলারকান্দি, উত্তর বাঘমারা, তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা, ইসলামপুর, কুটাউরা, বাড্ডা, নুনুয়া, পাবিজুরি, শ্রীরামপুর, মুর্শিবাদকুরা, পশ্চিম গগড়া, পূর্বগগড়া, বড়ময়দান, গাগড়াকান্দি, তেলিমেলি, গোপালপুর, হাউদপুর, বর্ণি ইউনিয়নের পাকশাইল, সত্পুর, কাজিরবন্দ, নোয়াগাঁও, উজিরপুর, দাসেরবাজার ইউনিয়নের চানপুর, অহিরকুঞ্জি, উত্তরবাগীরপাড়, দক্ষিণবাগীরপাড়, পানিশাইল, ধর্মদেহী, চুলারকুড়ি, কোদালী, ধলিরপাড়, নেরাকান্দি, মাইজমজুড়ি, মালিশ্রী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কাউয়াদিঘী, হাইল হাওর, কেওলার হাওরসহ প্রায় প্রতিটি হাওরে এখন থৈ থৈ পানি। হাওর পাড়ের নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বি জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া নগদ অর্থও বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আলীম জানান, হাকালুকি পাড়ে বন্যাকবলিত তিন উপজেলার ১২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িক বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে রাজনগর ও সদর উপজেলার ১৮টি স্কুল বন্ধ রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বাড়তে শুরু করেছে। গত দুই দিনে প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এতে যমুনা তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী মাটির বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাউবো বালির বস্তা নিক্ষেপের কাজ শুরু করেছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম পেইঞ্জ জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি এবং থেমে থেমে বর্ষণের কারণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে সমতল ও নিচু এলাকায় এবং চরাঞ্চলের ২৭টি ইউনিয়নের নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। তবে গতকাল পর্যন্ত ফসল ও ঘরবাড়ির কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর