সোমবার, ৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনছে গলদা চিংড়ি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনছে গলদা চিংড়ি

রাজশাহীতে মিঠা পানিতে এখন হচ্ছে গলদা চিংড়ির চাষ। জেলায় ২০ জন চাষি এখন পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ করছেন। অন্য মাছের পাশাপাশি চিংড়ি চাষকে বাড়তি আয় হিসেবে দেখছেন তারা। এ চাষে সফলতা আসলে খুলে যাবে এ অঞ্চলের মৎস্য চাষিদের ভাগ্য। জেলার অর্থনীতিতে যোগ হতে পারে নতুন মাত্রা এমনটাই মনে করছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। রাজশাহীর পবা উপজেলার হুজুরীপাড়া ইউনিয়নের কর্ণহার গ্রামের মৎস্য চাষি শহিদুল ইসলাম শহিদ মিঠা পানিতে প্রথম গলদা চিংড়ি চাষ শুরু করেন চলতি বছর। অন্য  মাছের পাশাপাশি তিনি ১৩ হাজার চিংড়ি পোনা তার ৫০ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুরে ছাড়েন। প্রতিটি পোনার দাম পড়ে এক টাকা করে। ১৫ থেকে ২০ দিন পুকুরে রাখার পর তার মধ্যে চার হাজার চিংড়ি তিনি বিক্রি করেছেন প্রতিটি ৮ টাকা করে। এতে আয় হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। অন্য চিংড়িগুলো পুকুরে রেখেছেন বড় করার জন্য। শহিদের দেখাদেখি আরও ১০ জন মৎস্য চাষি চিংড়ি চাষে নেমেছেন। তারা জানিয়েছেন, ভালোভাবে পরিচর্যা করলে মাত্র ৫ থেকে ৬ মাসে একটি পিএল (পোস্ট লার্ভা) চিংড়ি ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ওজন হতে পারে। যা বর্তমান বাজারে প্রতি কেজির দাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।

এ অঞ্চলে মিঠা বা স্বাদু পানিতে পরীক্ষামূলকভাবে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মৎস্য গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশের মধ্যে তাজা মাছের ক্ষেত্রে রাজশাহী শীর্ষে অবস্থান করছে। সফলভাবে গলদা চিংড়ি উৎপাদন করতে পারলে রাজশাহী অঞ্চল আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। পবা উপজেলার সাবেক সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাহেদ আলী বলেন, গলদা চিংড়ি চাষে বিশেষ কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গেই চিংড়ি সহজে চাষ করা যায়। তবে আলাদা চাষ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। খাদ্যের ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। গলদা চিংড়ি পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যেই পরিপক্ব হয়ে ওঠে। ছয় মাসের মধ্যে এদের ওজন ১২০ থেকে ১৪০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। মাছের বৃদ্ধি ভালো। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ মাছ চাষে চাষি ও সরকার এগিয়ে এলে এ অঞ্চলের ভাগ্য বদলাবে। পবা উপজেলার কর্ণহারের চিংড়ি চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, পুকুরে কার্প জাতীয় মাছের পাশাপাশি গলদা চিংড়িও চাষ করছেন তিনি। সব মিলিয়ে তার ভালো লাভ হবে বলে জানান তিনি। হরিয়ানের আলী আকবর বলেন, তিনি শহিদুলের কাছ থেকে চিংড়ি সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়েন। তিনি ভালো লাভ পান। মাত্র ৫-৭ মাসেই এসব চিংড়ি বাজারে বিক্রি করা যায়। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ অঞ্চলে এখনো চিংড়ি চাষ ব্যাপকভাবে হয়ে উঠেনি। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সাহা জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলসহ জেলায় স্বাদু বা মিঠা পানিতে মূলত গলদা চিংড়ির চাষ সম্ভব। কারণ গলদা চিংড়ি স্বাদু পানিতেই বেড়ে ওঠে। রাজশাহীতে এখনো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তাজা মাছ বাজার দখল করে আছে। নতুনভাবে চিংড়ি বাজার স্থায়ী করতে কিছুটা সময় লাগবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর