সোমবার, ৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

দুই রাতে কোটি টাকার সবজি বাজার

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

দুই রাতে কোটি টাকার সবজি বাজার

গভীর রাতের আলো-আঁধারিতে মানুষের হাঁকডাক। এটি কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বরুড়া মগবাড়ি বাজারের চিত্র। সপ্তাহের রবি ও বৃহস্পতিবার বসে এ বাজার। দুই রাতে কেনাবেচা হয় কোটি টাকার সবজি। এই ব্যতিক্রমী বাজারটি কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, লালমাই ও বরুড়া উপজেলার কাছেই অবস্থিত। ২২ গ্রামের কৃষকের উৎপাদিত সবজি বিক্রি হয় এখানে। এ সবজির হাটকে অনেকে স্থানীয় কৃষকদের মেলা বলেও অভিহিত করেন। এখানে সবজির মধ্যে থাকে কচুর লতি, কচুর ফুল, কাঁকরোল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, করলা, বেগুন, পুঁইশাক, চালকুমড়া, বরবটি, গাজর, পেঁপে, কলা ও আলুসহ অনেক কিছু। এসব আসে বরুড়ার ধর্মপুর, লগ্নসার, চণ্ডিমুড়া, শিলমুড়ি ও আমড়াতলী, লালমাই উপজেলার কেশনপাড়, চেঙ্গাহাটা, লোলাই, মনোহরপুর, নাওরা, দুতিয়াপুর ও ভাবকপাড়া, সদর দক্ষিণের ধর্মপুর, রাজারখলা, চৌধুরীখলা, সালমানপুর, মঙ্গলমুড়া, চণ্ডিপুর, সদরের কালির বাজার থেকে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। বিশেষ করে চাঁদপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বেশি আসেন।  

গত শনিবার রাতে মগবাড়ি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে ঝুড়ি, বাইসাইকেল আর ভ্যানে সবজি সাজিয়ে আছেন কৃষকরা। সড়কে চলাচল করা গাড়ির আলো রঙিন সবজিতে পড়ে বর্ণিল হয়ে উঠছিল। বাজারে সড়ক সংলগ্ন স্থানে বাতি না থাকায় টর্চলাইট জ্বালিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা সবজি দেখেন। তাই দূর থেকে মনে হয় বাজারজুড়ে জোনাকি পোকা জ্বলছে। আরও দেখা গেছে, অনেক রাত ধরে বাজারের বিভিন্ন সংযোগ সড়ক দিয়ে গ্রামের রিকশা-ভ্যান, বাইসাইকেলে করে সবজি আসছে। এও দেখা গেছে, বেচাবিক্রি শেষে এসব কৃষক এই বাজার থেকেই পরিবারের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন। এককথায় এখানে এসে তারা হাতে নগদ টাকা পান, তারপর তা খরচ করে বাড়ি ফেরেন।

এরকম একজন কৃষক ভাবকপাড়ার ফারুক হোসেন জানান, নিজের জমিতে ফলানো সবজি বিক্রি করেন। ১০ বছর ধরে এ বাজারে সবজি নিয়ে আসছেন। লগ্নসার গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, ‘এ বাজারে কোনো খাজনা দিতে হয় না। মসজিদ, মাদ্রাসার উন্নয়ন এবং বাজারের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কিছু পয়সা দিতে হয়। সপ্তাহে দুই দিন বাড়ির পাশের এমন বাজারে সবজি বিক্রি করে নগদ টাকা পেতে বেশ ভালো লাগে।’ চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী সাইফুল খান জানান, এ বাজারে খাজনা দিতে হয় না। কম মূল্যে সবজি পাওয়া যায়। তাই এখানে ৩০ বছর ধরে আসছেন। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, ‘বাজারে আলোর ব্যবস্থা নেই। সবাই মিলে চাঁদা দিয়ে বাতি লাগানো যেতে পারে।’ মগবাড়ি বাজার কমিটির সভাপতি দ্বিজেন্দ্র পাল বড়ুয়া বলেন, ‘১৯৭১ সালের পর থেকে এখানে বাজার বসছে। সবাই তাদের খেতের সবজি এখানে এনে বিক্রি করেন। ৫-১০ কেজি থেকে শুরু করে ২০-৩০ মণ সবজি বিক্রি করেন একজন কৃষক। প্রথমে এ বাজারে কয়েকটি দোকান ছিল। সবজির হাটকে কেন্দ্র করে এখন এটি বড় বাজারের রূপ নিয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ৭-৮ মাস ধরে এখানে রাতে বাজার বসছে। অন্য সময় রাত ১২টা থেকে বাজার শুরু হয়ে ভোরে শেষ হতো। রোজায় তা সন্ধ্যায় শুরু হয়ে মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। দিনে কাজ করে রাতে সবজির হাট বসায় কৃষকদেরও সুবিধা হয়েছে। বাজারের অধিকাংশ জায়গা ব্যক্তিগত। এর কোনো সরকারি ইজারা হয় না। তাই সবজি বিক্রেতাদের থেকে কোনো খাজনা নেওয়া হয় না। তবে মসজিদ, মাদ্রাসার উন্নয়ন এবং বাজারের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কিছু টাকা দিতে হয়।’ কৃষিবিদ মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘মগবাড়ি বাজার সংলগ্ন কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, লালমাই ও বরুড়া উপজেলার মাটি অনেক উর্বর। এসব গ্রামে প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়। বাড়ির কাছের বাজারে সবজি বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর