শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাঝরাতের মানুষেরা

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

মাঝরাতের মানুষেরা

লোক নাট্যদলের তিন যুগপূর্তির চার দিনব্যাপী নাট্যোত্সবের দ্বিতীয় সন্ধ্যায় গতকাল মঞ্চায়ন হলো দলের নিজস্ব প্রযোজনার নাটক ‘মাঝরাতের মানুষেরা’। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চায়ন হয় এ নাটকটি। গাও সিং জিয়ানের নাটক থেকে ড. আবদুস সেলিম অনূদিত এ নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন দলের অধিকর্তা ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আয়োজক নাট্য সংগঠন লোক নাট্যদলের নিয়মিত নাট্যকর্মীরা। আজ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় বিকাল ৪টা থেকে পরপর তিনটি নাটকের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। নাটক তিনটি হলো— লিয়াকত আলী লাকীর গ্রন্থনা ও পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনালেখ্য ‘মুজিব মানে মুক্তি’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর ও রথযাত্রা’। একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে প্রদর্শিত হবে ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে পদাবলী যাত্রা ‘সোনাই মাধব’।

সুধীন দাশ ও করুণাময় গোস্বামী স্মরণে নজরুল ইনস্টিটিউট : স্মৃতিচারণ, আবৃত্তি ও গানে গানে সংগীতজ্ঞ সুধীন দাশ ও সংগীত গবেষক ড. করুণাময় গোস্বামীকে স্মরণ করেছে সুহৃদ ও শুভানুধ্যায়ীরা। গতকাল এ শোকসভার আয়োজন করে নজরুল ইনস্টিটিউট। এই দুই ব্যক্তিত্বের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন নজরুল স্বরলিপি সত্যয়ন পরিষদের সদস্য আহসান মোর্শেদ, শিল্পী শাহীন সামাদ, নাশিদ কামাল, ডালিয়া নওশীন, বুলবুল মহলানবীশ, সুবীর নন্দী, হাসিনা মমতাজ, অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, ফেরদৌস আরা, ইয়াসমিন মুশতারি, কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম, ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদ, শিল্পী রেবেকা সুলতানা, শিল্পী সালাহউদ্দিন আহমেদ, শিল্পী ও স্বরলিপিকার সেলিনা হোসেন, ছন্দা চক্রবর্তী, সুধীন দাশের জামাতা হাসান মাহমুদ স্বপন প্রমুখ। ইমেরিটাস প্রফেসর ভাষাসৈনিক ড. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক ভুইয়া। রফিকুল ইসলাম বলেন, জাতীয় কবির মহৎ সৃষ্টিকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সুধীন দাশ জাতীয় ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আর করুণাময় গোস্বামী নজরুল সংগীতকে সুধী সমাজে তুলে ধরেছেন। সুধীন দাশ সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ছিলেন।

তিনি দেশভাগের পর ভারতে চলে যাননি। এমনকি ১৯৭১ সালেও দেশ ছেড়ে যাননি। সে সময় কবি তালিম হোসেনের সহায়তায় দেশে থেকে গিয়েছিলেন। শাহীন সামাদ বলেন, সুধীনদা পৃথিবীতে নেই কিন্তু প্রত্যেক নজরুল সংগীত শিল্পীর হৃদয়ে তিনি আছেন, থাকবেন চিরদিন। তার প্রত্যাশা ছিল শিল্পীরা ভালো করে গান গাইবে। নামি শিল্পী হওয়ার চেয়ে ভালো শিল্পী হওয়ার কথা বলেতেন সুধীন দাশ। তার কাছে গান শিখেছি। তার সংস্পর্শে এসে অনেক গান তুলেছি। সুবীর নন্দী বলেন, সুধীন দাশ চলে গেছেন কিন্তু তার কীর্তি আমাদের মাঝে রয়ে গেছে। আগামী প্রজন্মের কাছে তা এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে। নাশিদ কামাল বলেন, সুধীন দাশের মৃত্যুতে পিতৃহারা হলাম। মাথার ওপর থেকে যেন ছায়া সরে গেল। ইয়াসমিন মুশতারি বলেন, সুধীন দাশ পরিবারের সদস্যের মতো ছিলেন। তিনি আমার বাবা তালিম হোসেনের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সুধীন দাশ ও করুণাময় গোস্বামী দুজনই নজরুল গবেষণায় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। ফেরদৌস আরা বলেন, সুধীন দাশ নজরুল সংগীতের প্রতি খুব নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তিনি প্রতিটি শিল্পীকেই গুরুত্ব দিতেন। ভালো গাইতে পারুক আর নাই পারুক সবাইকে সমান ভালোবাসতেন। আহসান মোর্শেদ বলেন, সুধীন দাশ আদি গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে স্বরলিপি করার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব। আর করুণাময় গোস্বামীর সংগীতকোষ বইটি সংগীত ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। আবদুর রাজ্জাক ভুইয়া বলেন, গানের প্রতি ছোটবেলা থেকেই বেশ আগ্রহ ছিল সুধীন দাশের। গানের প্রতি একাগ্রতার কারণে তার শিক্ষাজীবন খুব বেশি দূর এগোয়নি। ১৯৪৮ সালে ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ গানটি দিয়ে ঢাকা রেডিওতে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৫৪ সালে এটিকে নজরুল সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সে সময় নজরুলের গানের বিকৃতি ঘটেছিল। আর নজরুলের গানের বিকৃতি রোধে কাজ শুরু করেন সুধীন দাশ। তার নিরলস প্রচেষ্টার কারণে নজরুল সংগীত বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। অপরদিকে করুণাময় গোস্বামীও ছিলেন বহুমাত্রিক লেখক। এই দুই ব্যক্তিত্ব আমাদের নিরন্তর প্রেরণার উত্স হয়ে থাকবেন। অনুষ্ঠানে সুধীন দাশের প্রিয় গান গেয়ে শোনান ইয়াসমিন মুশতারি, নাশিদ কামাল, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইয়াকুব আলী খান প্রমুখ। নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন সীমা ইসলাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর