বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

নারায়ণগঞ্জে খোকন শাহ ও মালার অডিও রেকর্ড ফাঁস

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের দুজন দায়িত্বশীল নেতার কথোপকথনের অডিও রেকর্ড নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মীরা ওই অডিও রেকর্ডের ব্যাপারে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত। দলের দায়িত্বশীল একজন পুরুষ ও মহিলা নেতা এমন ভাষা ব্যবহার করতে পারেন বলে আমাদের ধারণা ছিল না। বিশেষ করে দলের সিনিয়র নেতাদের যেভাবে যে ভাষায় গালাগাল করেছেন এরা যদি দলের নেতা-নেত্রী হয়ে থাকেন, তবে দল কী পাবে আর সমাজই বা কী পাবে? আমাদের বলার কোনো ভাষা নেই। তবে আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। আমরা তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’ জানা গেছে, অডিও রেকর্ডে প্রকাশ পাওয়া দলের ওই দুই শীর্ষ নেতার একজন হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা এবং অন্যজন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাহমুদা মালা। এদিকে এই অডিও রেকর্ডে প্রকাশ হওয়া অশালীন বক্তব্যের পর সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুব মহিলা লীগের কমিটি গঠন নিয়ে কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ সঠিক ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিভিন্ন থানা কমিটির নেতার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করলে তারা বলেছেন, ‘যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের ত্বরিত সিদ্ধান্তে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ও সম্মান রক্ষা করেছেন। যে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে এমন কথাবার্তা হতে পারে, তাদের পক্ষেই সম্ভব সামাজিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ নারীদের নিয়ে যুব মহিলা লীগের মতো সংগঠনে স্থান দেওয়ার অপচেষ্টা করা। বিশেষ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন যাকে সভানেত্রী বানাতে সুপারিশ করেছেন এবং যার পক্ষে এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছেন সেই নারী বিএনপির শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ক্রসফায়ারে নিহত মমিনুল্লাহ ডেভিডের “সঙ্গিনী” হিসেবে সমধিক পরিচিত। এমনকি ক্রসফায়ারের ঘটনার সময় নিহত ডেভিডের গাড়িতে এই নারীই ছিলেন যা নারায়ণগঞ্জের মানুষ জানে। ওই নারী পরবর্তীতে জাতীয় পার্টিতে প্রবেশের চেষ্টা করলেও প্রশ্নবিদ্ধ চরিত্রের কারণে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা তাকে স্থান দেননি। আর সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালা যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সেই নারীকে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গত কয়েক বছরে ভুইগড়, জালকুড়ি, শিবু মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল।’ নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘রাজনৈতিক কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা সত্ত্বেও এমন প্রশ্নবিদ্ধদের যুব মহিলা লীগের শীর্ষপদে আসীন করার অপচেষ্টার নেপথ্য রহস্যটি আমরা জানলেও দলের সম্মানে বলতে চাচ্ছি না।’

অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালার মধ্যে কথোপকথনের দুটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর রীতিমতো ক্ষোভের আগুন জ্বলছে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এর মধ্যে একটি অডিওতে খোকন সাহা ও মাহমুদা মালা দলের একাধিক ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাকে প্রকাশের অযোগ্য, অকথ্য-অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেছেন। অন্য অডিওটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালা এক ছাত্রলীগ নেতাকে মাত্র ৪০ সেকেন্ডের কথোপকথনে ১৬ বার প্রকাশের অযোগ্য গালাগাল ব্যবহার করেছেন। সেখানেও দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গালমন্দ করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, ‘বিষয়টি দলের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিভিন্ন থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, দলের একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হয়ে ও বিশেষ করে একজন মহিলার মুখ থেকে এমন ভাষা শুনে আমরা বাকহীন। তাদের ভাষা শুনে মনে হয়েছে, দলকে ধ্বংস করার মিশনে নেমেছেন তারা। এমন কোনো রহস্যজনক সম্পর্ক রয়েছে তাদের মধ্যে যে, ওই নেত্রীর কথায় তারা দলের চরম ক্ষতি সাধনেও পিছপা হচ্ছেন না। আমরা হতভম্ব যে, অসামাজিক কর্মকাণ্ডের ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে এমন নারীর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন তারা। কেন্দ্র এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তা না হলে দলের যে চরম ক্ষতিসাধন হবে তা পুষিয়ে নেওয়া কষ্টকর হবে কর্মীদের জন্য।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর