শিরোনাম
বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবার শুরু ভর্তিযুদ্ধ

সাত বছরেও হয়নি সমন্বিত ভর্তিপ্রক্রিয়া

আকতারুজ্জামান

এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর এবার শুরু হবে মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ। দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ২০১০ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ পদ্ধতি চালু করতে অনীহা দেখানোয় দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং বা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু হয়নি। ফলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে একজন শিক্ষার্থীকে দেশের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে হয়। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় অভিভাবকদেরও। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ ব্যাপারে জানিয়েছেন, ‘দফায় দফায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সমন্বিত ভর্তিপ্রক্রিয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিও এ ভর্তিপ্রক্রিয়া চালু করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া বা সহযোগিতা না পাওয়ায় এ পদ্ধতি চালু করা যায়নি।’ সমন্বিত ভর্তিপ্রক্রিয়া চালু করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই বলেও জানান নাহিদ।

একটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ২০১৪ সালেও একটি কর্মপ্রক্রিয়া চালু করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। এতে ভেটো দেন কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যরা। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয় করে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বর্ষে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সিলেটবাসীর আন্দোলনে এ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা সম্পন্ন হয়নি। মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানায়, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ফরম বিক্রি বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। পরীক্ষার আয়ের যে অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দেওয়ার কথা তাও দেন না। এই মোটা অঙ্কের টাকা হাতছাড়া না করতেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা পদ্ধতি মানতে চান না। তারা আরও জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে অনেক ক্ষেত্রে একটি আসনের জন্য শতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রতিযোগিতায় টিকতে শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে ভর্তি হন। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষার আয়োজন করা হলে একটি আসনের জন্য প্রতিযোগীর সংখ্যা পাঁচ-ছয় জনে নেমে আসত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পুঁজি করে প্রতি বছর ৩২ কোটি টাকারও বেশি কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলো হাতিয়ে নেয়। গুচ্ছ পরীক্ষার আয়োজন করা হলে শিক্ষার্থীরা স্বস্তি পেত উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালেয় ভর্তিচ্ছু আফিয়া সুলতানা টুম্পা বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরদিন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই দিন দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়। এতে বিপাকে পড়তে হয় ভর্তিচ্ছুদের। একটি পরীক্ষা দিয়ে অন্য পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।’ এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ৮ লাখ ১ হাজার ৭১১ ছাত্র-ছাত্রী পাস করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে আসন রয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৫০০। ৮৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে প্রায় ৩ লাখ। ২টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৫৪৫টি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার আসন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চার বছর মেয়াদি সম্মান শ্রেণিতে আসন রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার। তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি (পাস) কোর্সে আসন রয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার। সব মিলে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ১১ লাখ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, ‘মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতা করতে হলেও তাদের আসনের কোনো সংকট হবে না।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর