শিরোনাম
বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভুয়া দলিলে এনজিওর নামে ব্যাংক ঋণ

মামলা, আসামি ১১ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

ভুয়া দলিল ও জাতীয় সনদ তৈরি করে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মুরাদপুর শাখা থেকে আড়াই কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘নওজোয়ান’ নামে একটি এনজিওর বিরুদ্ধে। ভয়াবহ এ জালিয়াতির খবর ফাঁস হয়ে গেলে ব্যাংকের অভ্যন্তরে শুরু হয় তোলপাড়। জালিয়াতির সত্যতা জানতে ওই শাখায় অডিট টিম পাঠালে ঘটনার সত্যতা পায় তদন্তকারী দল। পরে জালিয়াতির দায় স্বীকার করে ব্যাংকে অঙ্গীকারনামা দেয় ওই এনজিওর প্রধান নির্বাহী ইমাম হোসেন চৌধুরী। ভুয়া দলিল দিয়ে নওজোয়ানের আড়াই কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মুরাদপুর শাখার ম্যানেজার কেএম এজাজ। তিনি বলেন, নওজোয়ান নামে একটি এনজিও ভুয়া দলিল, আইডি তৈরি করে আড়াই কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। বিষয়টা সম্প্রতি নজরে আসে ব্যাংকের। এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য এনজিওর প্রধান নির্বাহী ইমাম হোসেন চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, ফাতেমা বেগম নামে এক মহিলা ২০০৮ সালে নগরীর বাকলিয়া এলাকার ফরিদুল হাসানের কাছ থেকে ১২ গন্ডা দুই কড়া জমি বায়না করেন। পরবর্তীতে ফরিদুল হাসান ওই জায়গা রেজিস্ট্রি না দেওয়ায় আদালতের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করাতে চট্টগ্রাম ৩য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ২০১০ সালে একটি মামলা দায়ের করেন ফাতেমা। একই সময়ে এক উচ্চ আদালতে এ জমি বেচা-বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আরও একটি রিট করলে আদালত ওই জমির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু এরই মধ্যে একটি চক্র একটি জাল দলিল, জাল জাতীয় পরিচয়পত্র এবং একটি ঘোষণা পত্র তৈরি করে। পরবর্তীতে ওই দলিল দিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক মুরাদপুর শাখা থেকে এনজিও ‘নওজোয়ানের নামে আড়াই কোটি টাকা কৃষি ঋণ নেওয়া হয়। সম্প্রতি এ বিষয়টি নজরে আসে ওই জমির বায়নাকারী এবং ব্যাংকের ঊর্ধ্বতনদের। ঘটনার সত্যতা জানতে একটি অডিট টিমও পাঠায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তাদের অডিটেও ধরা পড়ে জালিয়াতির বিষয়টি। পরে জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করে ব্যাংকে এ বছরের এপ্রিলে একটি স্বীকারোক্তিমূলক অঙ্গীকারনামা দেয় ওই এনজিও ‘নওজোয়া’নের প্রধান নির্বাহী ইমাম হোসেন চৌধুরী। ব্যাংকে দেওয়া ওই অঙ্গীকারনামায় ইমাম হোসেন বলেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ক্রেডিট বিভাগের প্রধান রাহাত উল্লাহর সঙ্গে যোগসাজশ করে ২০১৫ সালে ব্যাংকের মুরাদপুর শাখা থেকে আড়াই কোটি টাকা কৃষি ঋণ নেওয়া হয়। নওজোয়ানের সাধারণ সদস্য ফরিদুল হাসানের ভূমি প্রতারণার মাধ্যমে জাল দলিল তৈরি করে মুরাদপুর শাখায় জমা দেওয়া হয়। এ প্রতারণার জন্য আমিই দায়ী।’ এ জালিয়াতির বিষয়টি নজরে আসার পর গত ২৩ জুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আদালত-২ এ একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন ফাতেমা বেগমের স্বামী নুরুল আলম। ওই মামলায় নওজোয়ান প্রধান নির্বাহী ইমাম হোসেন চৌধুরী, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার কল্লোল রায় চৌধুরী, আনোয়ার মিয়া, মোজাম্মেল হক, ফরিদুল হাসান, মুজিবুর রহমানসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য সিএমপির কোতোয়ালি থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদী নুরুল আলম বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ অন্যরা আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ঋণ পাস হওয়ার পর ওই টাকা নিজেরাই আত্মসাৎ করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, ভুয়া দলিল তৈরি করে নওজোয়ান নির্বাহী ইমাম হোসেনকে সরবরাহ করেন মুজিবুর রহমান, জাল জাতীয় সনদপত্র এবং ফরিদুল হাসান সেজে জমি রেজিস্ট্রি করেন আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু মিয়া।

সর্বশেষ খবর