বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

তারা কি ইয়াহিয়ার বক্তব্য শোনেননি?

জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

তারা কি ইয়াহিয়ার বক্তব্য শোনেননি?

গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ কেউ বলতে চেষ্টা করেন একজনের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। যারা এ কথা বলেন তারা কি ইয়াহিয়ার ভাষণ পড়েননি? তাদের আমি পাকিস্তানের তৎকালীন শাসক ইয়াহিয়া খানের বক্তব্য পড়ার পরামর্শ দেব। একজন তো নেতৃত্ব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু সংগঠন নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে গিয়েছেন। মানুষকে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইয়াহিয়া খান একজনকেই দোষারোপ করেন, তিনি বঙ্গবন্ধু। গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন-সংগ্রামে একজনকে নেতৃত্ব দিতে হয়। একজনের নেতৃত্ব থাকে। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে সারা দেশ চারণের মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। অসহযোগের ঘোষণা দিয়েছেন। মুক্তিকামী মানুষকে সাহস দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন। ইয়াহিয়া খান তার ভাষণে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকেই দোষারোপ করেন। অন্যজনের কথা কি আর বলেছিলেন ইয়াহিয়া তার ভাষণে। যারা ইয়াহিয়া খানের ভাষণ পড়েননি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ইয়াহিয়া খান তো এক ব্যক্তিকে ফাঁসির রায় দিয়ে গেছেন, কই আর কাউকে তো দেয়নি। সব কথা বলার সময় হয়নি, সময় আসবে।

চক্রান্ত চলছে জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখনো কিছু লোক আছে দেশকে পিছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায়। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের উন্নত, সুন্দর ও সম্ভাবনাময় জীবন গড়ে তুলতে কাজ করে চলেছি, এটা যেন কেউ ব্যাহত করতে না পারে। তিনি বলেন, এদেশের জন্য জাতির পিতা জীবন দিয়েছেন। আমি হারিয়েছি আপনজনদের। আমরা দুই বোন কি যাতনা নিয়ে বেঁচে আছি তা স্বজনহারা মানুষ বুঝতে পারেন। এদেশের মানুষের জন্য বাবা কষ্ট করেছেন, জীবন দিয়েছেন। আমার জীবনে চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। একটাই চাওয়া, বাবার অসমাপ্ত কাজ যেন করে দিতে পারি। বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্ত করতে ১৯৮০ সালে ব্রিটিশ এমপিদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন হয়েছিল উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, তাদের তদন্ত করতে আসতে দেননি জেনারেল জিয়া। আমার প্রশ্ন হলো, জিয়া যদি নির্দোষ হতেন, নিশ্চয়ই তদন্ত করতে আসতে দিতেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল খুনি মোশতাক। তার দোসর ছিল জিয়া। মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে জিয়াকে সেনাপ্রধান করে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা নিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। যুদ্ধাপরাধীদের কারামুক্ত করে ক্ষমতায় বসান। ইত্তেফাকে বসে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দিয়ে রাজনৈতিক সংগঠন করিয়েছেন। জিয়াউর রহমান তাদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী উপদেষ্টা করেছেন। জেনারেল এরশাদ ফ্রিডম পার্টি করিয়েছেন। খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য করে বিরোধী দলে বসিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, সাংবাদিক আবেদ খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। সূচনা বক্তব্য রাখেন, দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর কবিতা আবৃত্তি করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান শোক সংগীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ১৫ আগস্ট ঘাতকের হাতে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কী অপরাধ করেছিল আমার মা, ভাই ও তাদের স্ত্রীরা। আমরা দুই বোন কত কষ্টে বেঁচে আছি স্বজন হারিয়ে তা কেবল যারা স্বজন হারিয়েছেন তারাই বুঝবেন। অন্য কাউকে বোঝাতে পারব না এই কষ্ট, এই ব্যথা। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে কাফনের কাপড় কেনারও সময় দেওয়া হয়নি। কারফিউ দেওয়া হয় টুঙ্গিপাড়ায়। আমার মা ও অন্যদের কোনোমতে বনানী কবরস্থানে মাটি দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, আমি তো বিচার চাইতে পারিনি। আমরা বাংলাদেশে আসতে পারিনি। রেহানা (শেখ রেহানা) লন্ডনে ছিল। তার পাসপোর্টের সময় শেষ হয়ে যায়। তা রিনিউ করতে দেননি জিয়াউর রহমান। আমরা রিফিউজি হয়ে বিদেশে ছিলাম। শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৯ সালে সুইডেনে রেহানা প্রথম প্রতিবাদ করে। ১৯৮০ সালে লন্ডনে যখন যাই, সেখানে প্রথম প্রতিবাদ করি। আমরা তদন্ত কমিশন গঠন করি। প্রবাসী বাঙালিরা সহযোগিতা করে। ওই কমিশনের কাজে স্যার টমাস উইলিয়াম বাংলাদেশে আসতে চাইলেন। জিয়াউর রহমান অনুমতি দেননি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন বাংলাদেশে ফিরে আসি। মামলা করার কোনো অধিকারও নেই। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় যেদিন ঘোষণা হবে সেদিন বিএনপি হরতাল ডাকে। যেন বিচারক যেতে না পারেন। যদি জড়িত না থাকে তবে কেন তারা হরতাল দিল। বিচারককে ধন্যবাদ দেই। অনেক হুমকি সত্ত্বেও তিনি রায় দেন। তিনি বলেন, জিয়ার আমলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেওয়া হয়। খুনিদের যারা পুরস্কৃত করে তারা খুনি ছাড়া আর কী?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা ভেবেছিল ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে। তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। দলের নেতা-কর্মীর উদ্দেশে আওয়মাী লীগ সভানেত্রী বলেন, এখনো অনেকে আছে যারা দেশকে পিছিয়ে নিতে চায়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর