বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

চুরি যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার পণ্য

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর কার্গো গুদাম

মাহবুব মমতাজী

চুরি যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার পণ্য

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো গুদামে থাকা কোটি কোটি টাকার মাল চুরি যাওয়া এখন নিত্য ঘটনা বলে অভিযোগ করেছেন আমদানিকারকরা। আগে এমন ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিয়ে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও সুরাহা হয়নি। সর্বশেষ ২৯ জুন কার্গো গুদাম থেকে উধাও হয়ে যায় ৪ হাজার পিস মোবাইল ফোন সেট। ওই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ঢাকা কাস্টমস হাউস। বিভিন্ন সময়ে হাজার কোটি টাকার বেশি পণ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে। আর মালামাল আমদানিতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতির দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। জানা যায়, ইনভেনট্রির জন্য দুজন কাস্টমস কর্মকর্তা শফিকুর রহমান ও মুজিবুর রহমান ২৯ জুন কার্গো গুদামে যান। এপিবিএন সদস্যদের উপস্থিতিতে গুদামের গেট খোলার পর অনেক বস্তার মুখ খোলা পাওয়া যায়। বস্তাগুলো যাচাই করার পরই তারা ৪ হাজার পিস মোবাইল ফোন সেট চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হন। এর আগের মাসেও প্রায় ৪০০ কোটি টাকার গার্মেন্ট পণ্য চুরি যায়। আমদানিকারকদের অভিযোগ, ২২ জুন বিমান কর্তৃপক্ষ হিমাগার ভাড়ার একটি নতুন হার নির্ধারণ করে। এই কর্তৃপক্ষের কর্মীরা সব ধরনের পণ্য আসার পরই তা সংরক্ষণের নামে সপ্তম দিন পর্যন্ত প্রতি ৫০ কেজির জন্য ৫০, অষ্টম দিন থেকে ১৪তম দিন পর্যন্ত ৭০ এবং ১৫তম দিন থেকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত ৩০০ টাকা হারে ভাড়া নেন। কিন্তু পরবর্তীতে মাল ডেলিভারি পাওয়া যায় না। জানা গেছে, একাধিক চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বেশি পণ্য চুরির অভিযোগ সিভিল এভিয়েশন, এয়ারফ্রেইট ও বিমানের টেবিলে ফাইলবন্দী হয়ে আছে। বছরের পর বছর ধরে এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়নি।

সিভিল এভিয়েশনের এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই প্রতিবেদককে জানান, কার্গো গুদামে বিমান, সিভিল এভিয়েশন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) তিন সংস্থার নিয়ন্ত্রণে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। আর চুরি ঘটনাগুলো মূলত ঘটে দ্রুত মালামাল ডেলিভারি না দেওয়ার কারণে। দ্রুত ডেলিভারি না হওয়ায় অনেক মাল এসে জমে থাকে, যা পরে খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় কার্গো বাইরে স্তূপ হয়ে পড়ে থাকে। সেখানে বৃষ্টির পানি পড়ে শত শত কোটি টাকার মাল নষ্ট হয়ে যায়। সূত্র জানায়, এই বর্ষা মৌসুমে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অবহেলা আর উদাসীনতায় কয়েক হাজার টন পণ্যের কার্গো গুদামে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ কার্গো গুদামে র‍্যাকের মধ্যে প্লেট নেই। তাই সেখানে মাল সাজিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ফলে রানওয়ে থেকে অবাধে চুরি হচ্ছে গার্মেন্ট আইটেম, মোবাইল ফোন সেট, ইলেকট্রনিক্সসহ মূল্যবান পণ্যসামগ্রী। অথচ সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট প্রতিনিধিরা বিদেশ থেকে মালামাল ঢাকায় পৌঁছার সঙ্গে এয়ার অ্যারো বিলের কপি নিয়ে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে গিয়ে পণ্যের হদিস পান না। ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম এ খায়ের জানান, নিয়ম অনুযায়ী কোনো এয়ারলাইন্স অবতরণ করার ৬ ঘণ্টার মধ্যে সেখানকার মালামাল কার্গো গোডাউন, ওয়্যারহাউস কিংবা ক্যানোপি এলাকায় পৌঁছাতে হবে। বিমানের কাছ থেকে মাল ডেলিভারি নিতে ২০-৩০ টেবিলে ২০০-১০০০ টাকা করে শুধু ঘুষ দিয়ে ফাইল ছাড়াতে হয়। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট সি অ্যান্ড এফ এজেন্টরা দিনের পর পর দিন অপেক্ষা করেও মাল বুঝে পান না। সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে মাল খালাসের ক্ষেত্রে শুল্ক গোয়েন্দার হয়রানি বন্ধে ১৯ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য এম এ হাকিম। এর আগে ১৬ এপ্রিল বিমানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সভায় হয়রানি ও মালামাল চুরির ঘটনা ঠেকাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। ১০ জুন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে একই বিষয়ে আলোচনার পরও তা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর