বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ ও জাপার মধ্যে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগ ও জাপার মধ্যে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ (১৭৭-শ্যামপুর-কদমতলী) আসন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। আসনটি এবার জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায়। জাতীয় পার্টি চায় জয়ের ধারাবাহিকতা। বিএনপির প্রার্থীদের মিটিং-মিছিল না থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। দলের চার মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। পথসভা, কর্মিসভা এবং জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচির মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের কাছাকাছি থাকছেন তারা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সানজিদা খানম বিজয়ী হয়েছিলেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। সানজিদাকে পরে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করা হয়। এ আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে মাঠে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ড. আওলাদ হোসেন। গত নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সঙ্গে তীব্র লড়াই করে পরাজিত হন। আওলাদ হোসেন এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ ও কর্মিসভার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দূরীকরণে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ড্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মতো সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সানজিদা খানম এবারও সরাসরি ভোট করতে মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া এ আসনে নৌকা প্রতীক পেতে কাজ করছেন শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন। পিছিয়ে নেই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেন স্বপন। তিনিও নিজের মতো করে মাঠ গোছানোর কাজ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কাজ করলেও এখন সেভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না। দলের প্রয়োজনে তারা এমপির কাছে যেতে পারেন না। আওয়ামী লীগের চার প্রার্থীই বলছেন, যিনিই  দলের প্রার্থী হবেন, তার পক্ষে তারা কাজ করবেন। এ আসনে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আবদুল হাই এবার মুন্সীগঞ্জের একটি আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। সাবেক এমপি সালাহউদ্দিনের ছেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন মনোনয়ন চাইবেন। তিনি নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়া এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর মীর হোসেন মিরু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শ্যামপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আ ন ম সাইফুল ইসলাম। আগামী নির্বাচনেও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এ আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী। আশির দশকেও এ আসনে বাবলা দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে অনেকটা আগেভাগেই নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রায় প্রতিদিনই শ্যামপুর-কদমতলীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও মহল্লায় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন তিনি। রাজধানীতে জাতীয় পার্টির সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নির্বাচনী এলাকায়। দলের সব কেন্দ্রীয় ও মহানগরের কর্মসূচিতে বাবলার নির্বাচনী এলাকার জাতীয় পার্টি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ঢাকা মহানগরের অন্য এমপিদের চেয়ে এলাকায় বেশি সময় দেন বাবলা। আবার গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বাবলা নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশ এবং জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই দলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর