শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

লাঠিখেলা জমেছিল বগুড়ার শেরপুরে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

লাঠিখেলা জমেছিল বগুড়ার শেরপুরে

বগুড়ার শেরপুরে ঈদুল আজহা-পরবর্তী জমে ছিল গ্রামীণ লাঠি খেলা। খেলা দেখতে কয়েক গ্রামের মানুষ ভিড় করে। বুধবার রাত পর্যন্ত চলে এ লাঠি খেলা। এ আয়োজন করা হয়েছিল শেরপুরের বিশালপুর ইউনিয়নের পালাশন গ্রামে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে আয়োজন করা হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী এ লাঠি খেলার। বুধবার বিকালে পালাশন গ্রামে এ খেলা শুরু হলে ঢোল-বাজনার শব্দে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ মিলেমিশে লাঠি খেলা দেখে। সন্ধ্যার পরও খেলা দেখতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লাঠিয়ালদের পরনের পোশাকে ছিল না নির্ধারিত কোনো রং। যে যার মতো পোশাক পরে মাঠে নামেন। তাদের প্রত্যেকের হাতেই শোভা পেয়েছে বাঁশের লাঠি। একটু দূরে দাঁড়ানো কয়েকজনের গলায় ছিল ঢোলক। তাদের পাশেই বাঁশি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন পরেশ নামের এক ব্যক্তি। পরেশের বাঁশি বাজতেই ঢোলকরা ঢোল বাজাতে থাকেন। বাঁশির সুর আর ঢোলকের তালে তালে শুরু হয়ে যায় গ্রাম বাংলার বিলুপ্তপ্রায় লাঠি খেলা। পরেশের বাঁশির সুরে তাল মিলিয়ে ঢোল পেটাতে থাকেন ঢোলক সুমন, রবিন ও মহাদেব। কাঁসায় ঘষা দিতে থাকেন আরেক রবিন। ঢোলের তালে তালে চলতে থাকে লাঠিয়ালাদের পেটাপেটির ভয়ঙ্কর মহড়া। আব্বাস আলী, ইয়াসিন আলী, মোজাম্মেল হক, কানু, বানু, সালামসহ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় এ খেলায় অংশ নেন। লাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে নিজেরাই নিজেদের ওপর আঘাত-পাল্টা আঘাত হানতে থাকেন। কিন্তু কৌশলী হাতের ক্যারিশমায় একে অন্যের আঘাত ঠেকিয়ে দিচ্ছিলেন। কখনো কখনো লাঠির আঘাতে খেলোয়াড়ের কেউ কেউ কুঁকড়ে উঠছিলেন। পরক্ষণে অন্যজনের ওপর পাল্টা আঘাত হানছিলেন। মাঠের চারপাশে উপস্থিত দর্শকরা একে অন্যের ওপর লাঠির আঘাত-পাল্টা আঘাত দেখে আঁতকে উঠছিলেন। কিন্তু সেই আঘাত ঠেকিয়ে দেওয়ার কৌশল উপস্থিত সবাইকে ভয়ের মধ্যেও ভীষণ আনন্দ দেয়। কারণ সব আঘাতই লাঠি দিয়ে ঠেকিয়ে দিচ্ছিলেন খেলোয়াড়রা। ঈদ উপলক্ষে গ্রামে বেড়াতে আসা আগর আহমেদ, মিঠু আহমেদ জানান, লাঠি খেলা তাদের ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছে। আকাশ সংস্কৃতির কারণে ঐতিহ্য বহনকারী লাঠি খেলা সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রাম বাংলার সেই বিলুপ্তপ্রায় লাঠি খেলা দেখে এবারের ঈদের পর তারা ব্যাপক আনন্দ পেয়েছেন। একইভাবে গ্রামের অনেকেই এ খেলা দেখে মুগ্ধতা কথা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ খবর