শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কমছে ব্যবসা হারাচ্ছে জৌলুস

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ হালচাল - ১

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশের অন্যতম ভোগ্য পণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ। এক সময় দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রায় শতভাগ নিয়ন্ত্রণ হতো এ দুই বাজার থেকে। এ কারণেই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ সুখ্যাতি পায় প্রাচ্যের ‘ওয়াল স্ট্রিট’। নানা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ হারাতে বসেছে সেই জৌলুস। এক যুগের বেশি সময় ধরেই গাণিতিক হারে নিম্নমুখী চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বাণিজ্য। ব্যবসা নিম্নমুখী হওয়ার জন্য ব্যবসা বিকেন্দ্রীকরণ, অর্থ প্রতারণা বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম চেম্বার ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি, মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং ব্যবসা বিকেন্দ্রীকরণের কারণে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসা কমছে। এ ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বছরের বিভিন্ন সময় জোয়ারের পানি ওঠার কারণে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করেছে।

 এতে করে ব্যবসা কমছে। প্রায় অভিন্ন ভাবেই ব্যবসা ধসের কারণ চিহ্নিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল বশর চৌধুরীও । ব্যবসায়ীরা জানান, শত বছরের অধিক সময় মাথা উঁচু করে দেশের ভোগ্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। কিন্তু ১৯৮৭ সালে কমলাপুরে ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) স্থাপনের পর থেকেই এখানে ব্যবসা ধসের সূচনা হয়। আইসিডি স্থাপনের পর থেকেই ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরের বদলে পণ্য খালাস শুরু করে ঢাকায়। অনেক আমদানিকারক আন্ডার ইনভয়েসিং (মিথ্যা ঘোষণায়) পণ্য আমদানি করে তা আইসিডি দিয়ে ওইসব পণ্য খালাস করে। এতে করে অনেক প্রতিষ্ঠান চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ থেকে সরে গিয়ে ঢাকা কেন্দ্রিক হয়ে যায়। আবার স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির ফলেও খাতুনগঞ্জের সঙ্গে সারা দেশের দূরত্ব বাড়ে। ভারত থেকে স্থলপথে পণ্য আমদানির কারণে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসা পিছিয়ে পড়ছে। স্থলপথে পণ্য আসার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন আমদানিকারক সৃষ্টি হয়। ব্যবসা হয়ে যায় বিকেন্দ্রীকরণ। বিশেষ করে যশোরের বেনাপোল, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, দিনাজপুরের হিলি, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা, সাতক্ষীরার ভোমরা এবং কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির পর থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসা কমতে থাকে। এক সময় এ বাজারে সততা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যবসায় অব্যবসায়ীদের অনুপ্রবেশ ঘটে। তখন ব্যাংক চেক ও ডিও প্রথা চালু হয়। এ সুযোগে ডিও’র মাল উত্তোলন করে চেক পাস না করে অর্থ আত্মসাৎ শুরু হয়। ১৯৮৬ সালে এ ধরনের প্রতারণা শুরু হয় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে। পরে চেক ও ডিও প্রতারণা ‘স্টাইলে’ পরিণত হয়। দীর্ঘ এ সময়ে হাজার কোটি টাকার ওপরে অর্থ প্রতারণার ঘটনা ঘটে। এটিও ব্যবসা ধসের অন্যতম কারণ। ক্রমাগত লোকসান এবং খাতুনগঞ্জের অনুন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো এবং বিভিন্ন সময় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে জোয়ারের পানি ওঠা ব্যবসা ধসের কারণ। এলোমেলো বাঁক ও সরু গলির কারণে প্রায় লেগে থাকে যানজট। এতে করে দুর্ভোগে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। তাই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ বিমুখী হয়ে যায় ব্যবসায়ীরা অন্যত্র সরিয়ে নেয় ব্যবসা। তবে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে ব্যবসা ধসের অন্যতম কারণগুলো হলো ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ব্যবসায়ীদের গা-ঢাকা, বাজার বিশ্লেষণ সক্ষমতা না থাকায় চাহিদা সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের অস্বচ্ছ ধারণা, অধিক লাভের প্রত্যাশায় পণ্য মজুদ করা, প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হওয়া ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্পর্কে অজ্ঞতা। তাই দিন দিন ব্যবসা ধস নামছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর