শিরোনাম
রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিত্রের সন্ধানে ইসলামী দলগুলো

ভোটের জন্য যোগাযোগ হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ বড় দলগুলোর সঙ্গে

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

মিত্রের সন্ধানে ইসলামী দলগুলো

যে দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করলে সংসদে আসন নিশ্চিত হবে এমন মিত্রের সন্ধানে রয়েছে ইসলামী দলগুলো। এ লক্ষ্যে তারা সরব হয়ে উঠেছে। মাঠপর্যায়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৪-দলীয় জোটভুক্ত তরিকত ফেডারেশনের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে জানা যায়, সংগঠনটি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কয়েকটি দল নিয়ে নতুন ইসলামী জোট গড়তে যাচ্ছে। জানতে চাইলে সংগঠনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এক বছর ধরেই তিনি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এর মধ্যে কয়েকজন কওমিপন্থি নেতা নতুন জোট করার ব্যাপারেও ঐকমত্যে এসেছেন। তবে এই জোট কীভাবে সামনে এগোবে, নির্বাচনী তৎপরতা, নাকি কর্মসূচিভিত্তিক হবে এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। জোটের বাইরে থাকা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামীতে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংগঠনের প্রচার সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, এককভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তে রয়েছি। তবে কোনো দল যদি আমাদের আদর্শ মেনে তথা সর্বস্তরে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে জোট করতে চায়, আমরা তাদের স্বাগত জানাব। মরহুম আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নির্বাচন সামনে রেখে তাদের নেতৃত্বে একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছে। সংগঠনের অফিস ও বায়তুল মাল সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল বলেন, তাদের নেতৃত্বে নির্বাচন সামনে রেখে জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। জোট না হলে তারা এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। একইভাবে ২০-দলীয় জোট ত্যাগ করা ইসলামী ঐক্যজোটও আগামীতে ইসলামী জোট করে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানতে চাইলে সংগঠনের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, প্রকৃত ইসলামী দলগুলো নিয়ে আমরা ইসলামী জোট গঠনের চেষ্টা করছি। যদি এই জোট না হয়, তাহলে মিনার প্রতীকে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেব। এদিকে বিএনপির সঙ্গে সখ্যে ভাটা পড়েছে শরিক ইসলামী দলগুলোর। মিত্র ইসলামী দলগুলোর কেউ কেউ সরকারি মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। আবার কেউ কেউ বিএনপির সঙ্গে  ঘনিষ্ঠতা কমিয়ে শুধু কৌশলী সম্পর্ক বজায় রাখছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোনের ডাকে সাড়া না দেওয়া, বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বেগম জিয়ার সাক্ষাৎ না করা, জোটে জামায়াতকে রাখা, আন্দোলনে সফল হতে না পারাসহ নানা কারণে আগামী নির্বাচনেও আশার আলো দেখছে না শরিক দলগুলো। উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে সখ্যে কিছুটা টান পড়েছে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর। দেশের বেশির ভাগ ইসলামী দল ও সংগঠনের সঙ্গে বিএনপির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক হিসেবে রয়েছে প্রথম সারির তিনটি ইসলামী দল। এগুলো হচ্ছে— জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। আর সম্প্রতি ইসলামী ঐক্যজোট ২০-দলীয় জোট ত্যাগ করেছে। জোটের বাইরে আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে সম্প্রতি সরকার কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায় হেফাজতে ইসলামের সঙ্গেও বিএনপির সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত আন্দোলন ও ভোটের রাজনীতির অংশ হিসেবেই ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে বিএনপির। তবে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কারণে বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় হতাশার পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের রোষানলসহ নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছে মিত্র ইসলামী দলগুলো। রাজনৈতিক কৌশলে ব্যর্থতার পাশাপাশি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ব্যস্ত থাকা এবং ইসলামী দলগুলোকে যথাযথ মূল্যায়নের অভাবসহ নানা কারণে বিএনপির প্রতি ইসলামী দলগুলোর দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিভিন্ন ইসলামী দলের যোগাযোগ ও সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতিকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাদের বৈঠককে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর