শিরোনাম
রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
নিরাপদ সড়ক দিবস আজ

বেপরোয়া গতির গাড়িতেই ৫৩ ভাগ দুর্ঘটনা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বেপরোয়া গতির গাড়িতেই ৫৩ ভাগ দুর্ঘটনা

দেশে ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। আর চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭ শতাংশ। পরিবেশ-পরিস্থিতিসহ অন্য কারণে দুর্ঘটনার পরিমাণ ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) দুর্ঘটনার কারণ-সংক্রান্ত পুলিশের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পেয়েছে। ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার বিশ্লেষণ রয়েছে এআরআইয়ের। প্রতিষ্ঠানটি নিজেও বড় দুর্ঘটনাগুলো তদন্ত করে থাকে। তাদের গবেষণা বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার ৪৩ শতাংশই ঘটছে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে। প্রতিদিনই সড়কে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। তারপর কান্নার নোনাজল শুকানো কিংবা আহাজারির শব্দ বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার আগেই স্টিয়ারিংয়ে শক্ত হয়েছে তাদের হাত। এক্সিলেটরে বার বার চেপে বসেছে ডান পা, হাওয়ার বেগে ছুটেছে গাড়িগুলো। যুদ্ধে নামা দুরন্ত ঘোড়সওয়ারের মতো ড্রাইভিং সিটে চেপে বসার আগে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা গাড়িটির কলকব্জা দেখে নেওয়ার ফুরসত নেই চালক এবং পরিবহন কর্তৃপক্ষের। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ‘সাবধানে চালাবো গাড়ি, নিরাপদে ফিরবো বাড়ি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের উদ্যোক্তা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর গত বছর সরকার ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ঘোষণা করে। দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে। এতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি থাকবেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, ২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২ হাজার ৩৯৪ জনের। আর যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে এই সংখ্যা ৮ হাজার। বেপরোয়া গতিই সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ হিসেবে মেনে নিয়ে ২০১৫ সালের অক্টোবরে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক বৈঠকে গতি নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি রয়েছেন। কাউন্সিল মহাসড়কে বাসের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন করা যায়নি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, বাংলাদেশে গাড়ির ফিটনেস নিয়ে কোনো ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফিটনেস প্রক্রিয়া এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান সংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও আধুনিক করতে হবে। শুধু লেন বাড়িয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে হবে না। বিআরটিএ’র নিয়ন্ত্রণকে আরও জোরদার করতে হবে।

বিআরটিএ সারা দেশে ১০২টি চালক প্রশিক্ষণ স্কুলের নিবন্ধন দিয়েছে। লাইসেন্স পেতে যে প্রশিক্ষণের দরকার, তা এসব স্কুল থেকে পাওয়ার কথা। তবে বিআরটিএ সূত্র বলছে, এসব স্কুলের বেশির ভাগেরই হদিস নেই। কারণ, লাইসেন্স পাওয়া যায় দালাল ধরে। এ ছাড়া ১৯৯০ সালের পর থেকে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার পেশাদার চালকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নের তালিকা ধরে। সঠিকভাবে তাদের যোগ্যতার পরীক্ষাও নেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এখনো দেশের সড়ক মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী পাঁচ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। আইন প্রয়োগের দুর্বলতা। সড়ক মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিশৃঙ্খলাও চালক-মালিকদের বেপরোয়া মনোভাব এই সেক্টরকে দিন দিন অনিরাপদ করে তুলছে।

সর্বশেষ খবর