রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাজার নিয়ন্ত্রণে ৩০ সিন্ডিকেট

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

বাজার নিয়ন্ত্রণে ৩০ সিন্ডিকেট

সিন্ডিকেটের অক্টোপাসে ঘুরপাক খাচ্ছে চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের বাণিজ্য। রমজান, কোরবানি কিংবা অন্য কোনো মৌসুমকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। ব্যবসায়ী নেতা থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সবাই রয়েছেন সিন্ডিকেটে। ‘অনুকূল পরিবেশ’ সৃষ্টি করেই ৩০ সিন্ডিকেট প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। সিন্ডিকেট কারসাজি বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, এখন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা এখানকার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন না। বরং করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং কিছু ব্যবসায়ী নেতার হাতে জিম্মি প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। তারা সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীদের কোণঠাসা করে রেখেছেন। তারাই নিয়ন্ত্রণ করেন ভোগ্যপণ্যের বাজার। এসব সিন্ডিকেট অবৈধভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থির   করে তোলে।

অব্যবসায়ীদের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সিন্ডিকেট বলে কোনো শব্দ নেই। যে কেউ চাইলে ব্যবসায় নামতে পারেন। পণ্য আমদানি করতে পারেন। এক্ষেত্রে কেউ বাধা দিতে পারে না। বাস্তবে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সিন্ডিকেট রয়েছে কি-না তাও আমার জানা নেই। অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েক বছর ধরেই দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বিভিন্ন উৎসব ও মৌসুমকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে ওঠে ৩০ সিন্ডিকেট। তবে কয়েকটি সিন্ডিকেট ঘুরেফিরে একাধিক ভোগ্যপণ্যের দাম কারসাজিতে নেপথ্য ভূমিকা পালন করে। তারা উৎসবের আগে কিংবা কোনো একটি সময়কে টার্গেট করে আগে থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কয়েক দিনের ব্যবধানে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার কোটি টাকা। এ সিন্ডিকেটে রয়েছেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী নেতারা। কিছু কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানেরও সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের এক সময়ের দিনমজুরও সিন্ডিকেট সদস্য হয়ে এখন হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক। চট্টগ্রামের অন্যতম পাঁচ আমদানিকারকসহ ব্যবসায়ীদের ১০ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে চালের বাজার। এ সিন্ডিকেটগুলো মিয়ানমার, ভারত এবং থাইল্যান্ড থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করে তা গুদামজাত করে। পরে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অস্থির করে তোলে বাজার। চালের বাজার অস্থির করে প্রতি বছর হাতিয়ে নেন হাজার কোটি টাকা। দেশের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে শীর্ষস্থানীয় দুই করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও তিন সুগার রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানসহ আট সিন্ডিকেট। দেশের চাহিদার অর্ধেকের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে এ সিন্ডিকেটগুলো। তারা বিদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে থাকে। এ সিন্ডিকেটগুলো রমজানকে বিপুল মুনাফার সময় হিসেবে বেছে নেয়। বিগত সময়ে রমজানে চাহিদার চেয়ে বেশি চিনি মজুদ থাকলেও কৌশলে তারা বাজারে কৃত্রিম চিনির সংকট তৈরি করেন। এ সংকট তৈরি করে হাতিয়ে নেন হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে তেল, ছোলা, মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কমপক্ষে ১৫ সিন্ডিকেট। তারা মূলত রমজান, কোরবানির আগে এবং মৌসুমের আগে পণ্যভিত্তিক সিন্ডিকেটে নামেন। পণ্য আমদানি করে গুদামজাতের পর বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। পরে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর