মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন বাজিকর

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ হালচাল (শেষ)

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ঝুঁকছেন ক্রিকেট বাজিতে। কিছু কিছু ব্যবসায়ী ব্যবসার চেয়ে বেশি মনোনিবেশ করছেন ক্রিকেট বাজিতে। টি-২০, ওয়ানডে কিংবা ফ্র্যাঞ্জইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টকে ঘিরে চলে তাদের বাজির ঘোড়া। লগ্নি করে কোটি কোটি টাকা। ক্রিকেট বাজিতে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী এরই মধ্যে হারিয়েছেন ব্যবসার মূলধন। হয়েছেন নিঃস্ব। বসেছেন পথে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল বশর চৌধুরী বলেন, কোনো প্রকৃত ব্যবসায়ী ক্রিকেট বাজিতে জড়িয়ে পড়তে পারে না। যদি কেউ ব্যবসা ছেড়ে বাজিতে জড়িয়ে পড়েন তখন তিনি আর ব্যবসায়ী থাকেন না। ব্যবসায়ীদের এ ধরনের পরিবর্তন দেশের ক্ষতি। ব্যবসায়ী সমাজের ক্ষতি। তাই ব্যবসায়ীদের ক্রিকেট বাজি থেকে সরে আসা উচিত। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা ক্রিকেট বাজিতে জড়িয়ে পড়া দেশের জন্য অশনিসংকেত। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্রিকেট বাজি বন্ধ না হলে এক সময় কমে যাবে আমদানি। এতে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েক বছর আগে দেশের ঐতিহ্যবাহী পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ চাক্তাইয়ে ক্রিকেটকে ঘিরে বাজি শুরু হয়। শুরুতে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে বাজি ধরত। এখন দেশের গণ্ডি  পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাজি ধরছেন। তারা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বেট৩৬৫ এবং  বেট৬৯ নামে দুটি  বেটিং সাইটের অ্যাকউন্ট খুলে বাজি ধরছেন। কেবল ম্যাচ নয়, প্রতি বল ও ওভার প্রতি বাজি ধরেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। শুরুতে আইপিএলকে ঘিরে তাদের বাজি হলেও এখন সব ধরনের ক্রিকেটকে ঘিরেই চলছে ক্রিকেট বাজি। বিপিএল, দ্বিপক্ষীয় সিরিজ, আইপিএল কিংবা বিশ্বকাপে  কোটি কোটি টাকার ওপরে বাজি ধরা হয় শুধু খাতুনগঞ্জ এবং চাক্তাইয়ে। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজিতে হেরে দেউলিয়া হয়েছেন অনেক উঠতি ব্যবসায়ী। অনেকে ব্যবসার মূলধন হারিয়ে বসেছেন পথে। বাজিতে হেরে নিঃস্ব হওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন চাক্তাই এলাকার খোকন, সানু, হেলাল, খাতুনগঞ্জ এলাকার তানভীর অন্যতম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সঙ্গে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের শ্রমিকরাও বাজিতে জড়িয়ে পড়েছে। এখানে শত টাকা থেকে লাখ টাকার উপরে হয়ে থাকে একেকটা বাজি। এখানে প্রতি বলে, প্রতি ওভারে রান কিংবা উইকেট পতন, চার, ছক্কা হাঁকানো, ক্যাচ, সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি কিংবা খেলার জয় পরাজয় নিয়ে বাজি হয়। এখানে ১:১.৫, ১:২, ১:৩ অনুপাতে বাজি হয়ে থাকে। রায়হান (ছদ্মনাম) নামে খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী জানান, চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ক্রিকেট জুয়ার দালালি করেই অনেকে এখন কোটিপতি। অনেকে হয়েছেন নিঃস্ব। দেনায় পড়ে কেউ ক্রিকেট বাজি ছেড়ে দিতে চাইলেও অনেক সময় দালালদের কারণে তা সম্ভব হয় না। বাজিকরদের কেউ দেনায় পড়লে দালালরা ঋণ দিয়ে খেলা চালিয়ে যান। এক্ষেত্রে বাজিতে জিতলে ব্রোকার তার টাকা সমন্বয় করেন। শেষ পর্যন্ত দেউলিয়া হয়েই অনেককে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিতে হয়।

সর্বশেষ খবর