মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও সরাসরি নির্বাচন চান নারী নেত্রীরা

ইসির সংলাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব প্রার্থী ও ভোটারের জন্য সমান সুযোগ, ‘না ভোট’ চালু ও সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন দেওয়া ইত্যাদি একগুচ্ছ সুপারিশ করেছেন নারী নেত্রীরা। এ ছাড়া তারা গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলেছেন। তারা গতকাল নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই তথ্য দেন। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে ১৩ নারী নেত্রী অংশ নেন।

সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীদের অবস্থান উজ্জ্বল। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে তারা কাজ করছেন। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে দৃষ্টি আকর্ষণে তারা সক্ষম হয়েছেন। সরকার পরিচালনা, নীতিনির্ধারণ, ব্যবসা, বিচার কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক বাহিনী, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা, শ্রমবাজার এমনকি নির্বাচন কমিশনে তাদের অবস্থান সুসংগঠিত হয়েছে।

সংলাপ শেষে নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির দাবি করেছি। সবার জন্য সমান সুযোগের কথা বলা হলেও এটি মাত্র কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জন্য করা হয়। বাংলাদেশের সবার জন্য যে সমান অধিকার তা আমরা নির্বাচনে দেখতে চাই। সেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে অর্থাৎ নারী-পুরুষ সব ভোটারের জন্য করতে হবে। বাংলাদেশে নারীদের সমান অধিকার নেই। তারা বাংলাদেশে নিরাপত্তা থেকে শুরু করে চলাফেরা, রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমান সুযোগ পান না। আমরা এটি নিশ্চিত করার জন্য বলেছি। মেয়েরা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পান না এজন্য তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। এ ছাড়া নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার চাই না। কারণ ধর্মের ব্যবহারের ফলে নারীরা সবচেয়ে বেশি ভিকটিম হন।’ তিনি বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দল সংলাপের সময় রাজনৈতিক দলের সকল পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বিধানের বিরোধিতা করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। যাদের গঠনতন্ত্র সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তাদের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছি।’ প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক আরমা দত্ত বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের অনেক ভোটার হয়েছে। তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে নারীরা সহিংসতার শিকার হন। নির্বাচনে যাতে তারা এর শিকার না হন তার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা যাতে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা বলেন, ‘দেশের ৫২ শতাংশ নারী ভোটারের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচিত সংসদ আসে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সেই নারীদের যেন চাপ প্রয়োগ করা না হয়।

 নির্বাচনে নারীরা যাতে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজের মতামত প্রয়োগ করতে পারেন তার ব্যবস্থা ইসিকে করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় মসজিদে খুতবায় নারীদের ভোটদানে উৎসাহিত করার ব্যবস্থা করা চাই।’ এ ছাড়া তারা সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ানো, সরাসরি ভোটে নারীদের বেশি করে মনোনয়ন দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি জানান। এ ছাড়া নারী নেত্রীরা সংলাপে ভোটার তালিকা নিরীক্ষা, ভোটার দিবস উদ্‌যাপন, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণের সুপারিশ, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ও পর্যবেক্ষকদের নিবন্ধন না দেওয়া বা বাতিল করা, সারা দেশে সেনা মোতায়েন, সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন, বিচারিক ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন, সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন না করা, ‘না ভোটের’ প্রবর্তন, প্রবাসে ভোটাধিকার প্রয়োগ, জাতীয় পরিষদ গঠন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, ইলকেট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণসহ একগুচ্ছ সুপারিশ করেছেন।

নারীর ভূমিকার প্রশংসায় সিইসি : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে দেশের নারীদের পদচারণে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’ সিইসি বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীদের অবস্থান উজ্জ্বল তা আমরা সবাই জানি। বাংলাদেশের নারীদের অধিকার, ক্ষমতায়ন, দৃষ্টি আকর্ষণ পর্যবসিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশ গঠন ও দেশ পরিচালনায় নারীদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। নারী-পুরুষ সবার অংশগ্রহণে দেশমধ্য আয়ে উন্নীত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার পথে এগিয়ে গেছে।’ ‘আপনাদের পরামর্শ ও গুরুত্বপূর্ণ মত জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য নির্বাচন পরিচালনায় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি’, যোগ করেন সিইসি।

সাবেক ইসিদের সঙ্গে আজ সংলাপ

আজ সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন। সংলাপে উপস্থিত থাকতে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে চিঠি পাঠালেও বর্তমান সিইসিসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারও সাবেকদের ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আজিজ কমিশনের সদস্যরা ইসির সংলাপে নাও আসতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে সদ্য বিদায়ী রকিব কমিশনের সদস্যরা আসছেন সংলাপে।

এর আগে ৩১ জুলাই সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধি এবং ২৪ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করে কমিশন। আজ সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সূচি রয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর