রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নামেই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম

চার বছরেও পূর্ণতা পায়নি কক্সবাজারের ভেন্যু, লাখ দর্শকের স্থলে বসতে পারে ১১০০

মাহমুদ আজহার, কক্সবাজার থেকে ফিরে

নামেই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম

বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম —রোহেত রাজীব

পেছনে পাহাড় সামনে সমুদ্র। কক্সবাজারে সাগরতীরেই শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশের সর্বাধিক দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম হওয়ার কথা। কিন্তু গত চার বছরেও পূর্ণতা পায়নি আন্তর্জাতিক এই ক্রিকেট ভেন্যু। যেখানে লক্ষাধিক দর্শক একসঙ্গে বসে খেলা দেখার কথা সেখানে স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা মাত্র ১১০০।

কক্সবাজারের এই নয়নাভিরাম স্টেডিয়ামটি কেবল নামেই আন্তর্জাতিক, মানে নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের মতো অবকাঠানো নেই। উল্টো দিকে বসানো হয়েছে প্রেসবক্স ও ড্রেসিংরুম। ভিআইপি লাউঞ্জের পরিসর খুবই ছোট। ফ্লাডলাইট ও ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড নেই। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থাও ভালো নয়। ড্রেনেজব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এ কারণে নতুন পরিকল্পনায় মূল মাঠটি আরও ৪ ফুট উঁচু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই স্টেডিয়ামে ২০১৪ সালে মহিলা টি-২০ বিশ্বকাপের বেশ কয়েকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণির বেশকিছু ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাগরতীরে হওয়ার পরও গ্যালারি ছিল দর্শকশূন্য। ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এ স্টেডিয়ামটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি স্টেডিয়ামটির উদ্বোধনও করেন তিনি। উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত শুধু মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছে এ মাঠে। এ ছাড়া ‘এ’ দল, একাডেমি দলের সিরিজ ছাড়াও ঘরোয়া ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও সম্প্রতি বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এ মাঠেই। ভেন্যু কর্তৃপক্ষ আশাবাদী খুব দ্রুতই অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করে স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে। ভেন্যু কো-অর্ডিনেটর আহসানুল হক বাহার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘আন্তর্জাতিক এ স্টেডিয়ামটি এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি এটা সত্য। তবে আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনের পরপরই অসম্পূর্ণ কাজগুলো সমাপ্ত করা হবে।’ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, স্টেডিয়ামে ছোট্ট একটি দর্শক গ্যালারি। মাত্র ১১০০ জনের বসে খেলা দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। ভিআইপি লাউঞ্জটি খুবই ছোট। মাত্র কয়েকজন বসে খেলা দেখার সুযোগ পাবেন। ডাইনিংরুম নেই। স্টেডিয়ামের পাশেই শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কমপ্লেক্স ও একাডেমি মাঠ। এ ছাড়া আরেকটি অনুশীলন ভেন্যুও রয়েছে। স্টেডিয়ামে মোট ৭টি সেন্টার উইকেট রয়েছে। একাডেমি মাঠে ৫টি সেন্টার উইকেটের পাশাপাশি আছে ১২টি অনুশীলন উইকেট। পাশের অনুশীলন মাঠে রয়েছে ডজনখানেক উইকেট। সব মিলিয়ে এই কমপ্লেক্সে আছে ৩৬টি মানসম্পন্ন উইকেট। বাংলাদেশের আর কোনো ভেন্যুতে নেই এত উইকেট।

জানা যায়, কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং ক্রিকেট কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা মৌজায় সমুদ্রসৈকত-সংলগ্ন প্রায় ৫০ একর পরিত্যক্ত খাসজমিতে এ স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ সামনে রেখে তড়িঘড়ি করেই শুরু হয়েছিল এই স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বিশ্বকাপের ম্যাচ আর হয়নি। তারপর ভেন্যু তৈরির কাজও স্থবির হয়ে পড়ে। গত চার বছরেও শেষ হয়নি অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। স্টেডিয়ামে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো জলধারাও তৈরি করা হয়নি। কোনো ধরনের সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়নি। পুরনো দুটি স্কোরবোর্ড থাকলেও একটি ঝড়বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে। সেটাও মেরামত করা হয়নি। শুকনো মৌসুমে খেলা হলেও এই স্টেডিয়ামটি বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ সময় পরিত্যক্ত থাকে। স্টেডিয়ামের ঘাস বড় হয়ে গেছে। মাঠের ভিতরে কয়েকটি ছোট ডোবাও রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্টেডিয়ামটি ঠিকঠাকমতো গড়ে তুলতে পারলে এটা হবে সৌন্দর্যের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম স্টেডিয়াম। যোগাযোগব্যবস্থা খুবই ভালো। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে মাত্র ৫ মিনিটের পথ। পাশেই ফাইভ স্টার ও থ্রি স্টার মানের বেশ কয়েকটি হোটেল। কিন্তু অব্যবস্থাপনার জন্য স্টেডিয়ামটি এখনো আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়নি। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির (কক্সবাজার শাখা) সভাপতি এম আর মাহবুব বলেন, ‘কক্সবাজারের ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক মানের হলে, এখানকার পর্যটন ও ক্রিকেটের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করতে পারলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে। এ ক্ষেত্রে পর্যটনশিল্পের বিকাশের পাশাপাশি কক্সবাজারের সৌন্দর্য আরও ব্যাপকভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর