রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেন বাড়ছে

সেপ্টেম্বরে ২২৪টি অস্বাভাবিক ঘটনা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে। গত এক মাসে এ ধরনের ২২৪টি অস্বাভাবিক লেনদেন খুঁজে পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা সন্দেহ করছে, এ টাকা মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত অবৈধ তত্পরতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহৃত হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যানশিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে এ-সংক্রান্ত তথ্যও হস্তান্তর করেছে। এর আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লেনদেন নিয়ে জুলাইয়ে বিএফআইইউ যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তখনই বলা হয়েছিল আর্থিক খাতে সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক লেনদেন বেড়েছে। ওই প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫-১৬ (গত বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাবে) অর্থবছরে মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে অর্থায়নে ১ হাজার ৬৮৭টি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছিল, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫৯৩টি অর্থাৎ প্রায় ৫৪ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে ১৪১টি করে এসটিআর বাংলাদেশ ব্যাংক পেয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে প্রতি মাসে যার গড় সংখ্যা ছিল ৯১টি। এরপর চলতি মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সন্দেহজনক লেনদেনের আরও একটি পরিসংখ্যান পাঠায় বিএফআইইউ। যেখানে বলা হয়েছে, কেবল এ বছরের সেপ্টেম্বরেই সন্দেহজনক লেনদেনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৪টি। এটি আগের যে কোনো মাসের তুলনায় অনেক বেশি। বিএফআইইউর পরামর্শক দেবপ্রসাদ দেবনাথ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে সন্দেহজনক রিপোর্ট এসেছিল, পরবর্তী তদন্তের জন্য তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সরকারের সংশ্লিষ্ট বাহিনী অনুসন্ধান করে বের করে সন্দেহজনক লেনদেনের টাকা কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে।’ জানা গেছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে অর্থায়ন, ঘুষ-দুর্নীতি বা বেআইনি কোনো লেনদেনের বিষয়ে সন্দেহ হলে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো রিপোর্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বিএফআইইউতে রিপোর্ট করতে হয়; যা সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন (এসটিআর) হিসেবে বিবেচিত। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক তার অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ঘোষণার চেয়ে বেশি পরিমাণ লেনদেন করলে বা হঠাৎ সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক (দৈনিক ১০ লাখ বা তার বেশি) লেনদেন (এসটিআর) হলে ব্যাংকগুলো সেই রিপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ তা অস্বাভাবিক মনে করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের গ্রাহকের লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত করে। গ্রাহক সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে সরকারের অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের লেনদেনের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যেসব রিপোর্ট আসে, তার সবই চূড়ান্ত তদন্তে অস্বাভাবিক লেনদেন নাও হতে পারে। যাচাই-বাছাই শেষে অনেক লেনদেনই স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ছাড়া বর্তমানে আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে লেনদেনও বাড়ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহজনক লেনদেনও বাড়ছে। এর মানে এই নয়, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বা মানি লন্ডারিং বাড়ছে।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তারা গত ডিসেম্বর পর্যন্ত নমুনা ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত কিছু শাখায় মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধসংক্রান্ত সিস্টেম চেক পরিদর্শন শেষ করেছে। এসব রিপোর্ট পর্যালোচনা ও পরিদর্শনে আপাতদৃষ্টিতে সন্ত্রাসে অর্থায়নবিষয়ক কোনো তথ্য তারা পায়নি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর