রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

আগামী নির্বাচন ঘিরে সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনে প্রচার-প্রচারণা শুরু  করে দিয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। আসনটিতে মূলত দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী

লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর মধ্যেই লড়াই হবে। সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ননদের স্বামী হাবিবে মিল্লাত মুন্না। ২০১৪ সালে

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন তিনি।

 বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুন্না আসনটিতে এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি ইতিমধ্যেই জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন পাবেন বলে তৃণমূল নেতারা বলাবলি করছেন। তবে ২০০৮ সালের মতো শেষ পর্যন্ত যদি তিনি নির্বাচনে না দাঁড়াতে পারেন তবে তার স্ত্রী জেলা বিএনপি সভাপতি রুমানা মাহমুদ মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিএনপিতে যোগদান করে সিরাজগঞ্জ বিএনপির হাল ধরেন। এরপর থেকে টুকুর একক নেতৃত্বে চলছে জেলা বিএনপির কার্যক্রম। ২০০১ সালে বিএনপি থেকে সদর আসনে প্রার্থী হয়ে তিনি নির্বাচিত হন এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় জেলা সদরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দায়ের করা মামলার কারণে ২০০৮ সালে প্রার্থী হতে না পারলেও তার স্ত্রী রুমানা মাহমুদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন। নেতা-কর্মীদের নামে ট্রেন ও গাড়ি পোড়ানোসহ প্রায় দেড় শতাধিক মামলায় সিরাজগঞ্জ বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ড বর্তমানে কিছুটা স্তিমিত। সম্প্রতি ‘এক নেতার এক পদ’ দলীয় সিদ্ধান্ত হওয়ায় টুকু কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব রেখে জেলা বিএনপির সভাপতি থেকে পদত্যাগ করেন। পরে তার সহধর্মিণী রুমানা মাহমুদ দলের সভাপতি এবং সাইদুর রহমান বাচ্চু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তবে দলের সব কর্মকাণ্ডই টুকুর নির্দেশে পালিত হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মেজর (অব.) মোহাম্মদ হানিফ, সাবেক এমপি মির্জা মোরাদুজ্জামানের ছেলে মির্জা মোস্তফা জামান ও সাবেক পৌর মেয়র টি এম নুর-এ আলম হেলাল এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, সিরাজগঞ্জ সদর-কামারখন্দ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। যদি কোনো কারণে টুকু মনোনয়ন না পান সেক্ষেত্রে জেলা বিএনপির সভাপতি টুকুর সহধর্মিণী রুমানা মাহমুদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। সিরাজগঞ্জ-২ আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানান, এ আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ৭০ ভাগ ভোট পেয়ে বিজয়ী হবে। কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ আসন থেকে নির্বাচন করার কথা উল্লেখ করে বলেন, বিনা ভোটের সংসদ সদস্যরা শুধু জনগণকে শোষণ করেছে। আওয়ামী লীগ উন্নয়নের নামে লুটপাটে ব্যস্ত। এটা জনগণ বুঝতে পেরেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সদর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জামানত হারাবেন বলে তিনি মনে করেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম সদর আসনে নির্বাচন করে বিএনপি প্রার্থী টুকুর কাছে হেরে যায়। ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে জান্নাত-আরা-তালুকদার হেনরী নির্বাচন করে বিএনপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিরাজগঞ্জ সফরে এসে হাবিবে মিল্লাত মুন্নাকে জেলার উন্নয়ন সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার পর রাজনীতিতে নতুন মোড় নেয়। এরপর উন্নয়ন কাজের তদারকির পাশাপাশি জেলার রাজনীতিতে কঠোর ভূমিকা পালন করতে থাকেন তিনি। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে তার কর্মতত্পরতা আরও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে সংসদ সদস্যের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আগামীতে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরই মধ্যে তিনি প্রচারণায় নেমেছেন। জেলা সদরের রাজনীতি হাবিবে মিল্লাত মুন্না এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করায় আওয়ামী লীগের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব রয়েছে। ভিতরে ভিতরে আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, যা আগামী নির্বাচনে দলটির ‘গলার কাঁটা’ হতে পারে। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য জানান, জেলায় আগের মতো রাজনীতি ও নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তাই নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। প্রবীণ এ নেতার কথায় জেলা সদরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দ্বন্দ্বের আভাসটা স্পষ্টই জানান দিয়েছে। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না জানান, উন্নয়নের জন্যই মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার বেকার সমস্যা দূর করে সব মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে লড়াই জমে উঠবে বলে মনে করছেন সর্বমহল। মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যাওয়া ভোটের মাঠের চিত্র নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মুফতি মাও. মুহিববুল্লাহ, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, বাসদের নব কুমার কর্মকার ও সিপিবির ইসমাইল হোসেন সদর আসনে নির্বাচন করবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর