রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ফের সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব

পুরান ঢাকায় স্কুলছাত্র খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার চকবাজারে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে ফের স্কুলছাত্র খুন হয়েছে। ছুরিকাঘাতে নিহত ওই ছাত্রের নাম মোহাম্মদ হাসান (১৬)। গতকাল ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় চাঁদনীঘাট এলাকার শিশু হাসপাতালের গলিতে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ইসলামবাগ আইডিয়াল স্কুলের ছাত্র হাসানের এ বছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল।

হাসানের বাবা মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে লালবাগের পোস্তা এলাকার হাজী রহিম বক্স লেনের ২০ নম্বর বাড়িতে থাকেন। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার হলুদিয়ায়। শুক্রবার কয়েকজন ছেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসানকে মারধর করে। একপর্যায়ে তার পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় তারা। পরে তিনি জানতে পারেন, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে এ ঘটনার সূত্রপাত। জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তিনি। হাসানের বন্ধু আলিফ খান জানায়, কিছু দিন আগে একই এলাকার জুনিয়র আলীসহ তিন-চার জনের সঙ্গে সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে তর্কাতর্কি হয় হাসানের। শুক্রবার রাতে হাসান এবং তার বন্ধু বাবু, সোহান ও নাদিম নন্দকুমার রোডের শিশু হাসপাতাল গলিতে গেলে সেখানে আলী ও তার বন্ধুদের সঙ্গে ফের তর্কাতর্কি হয়। হাসান একপর্যায়ে আলীকে থাপড় মারে। এ সময় আলী তার কাছে থাকা ছুরি হাসানের পেটে ঢুকিয়ে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসানকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান জানান, গতকাল নিহত হাসানের বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার প্রধান আসামি আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছর ৬ জানুয়ারি উত্তরায় সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে স্কুলছাত্র আদনান কবির (১৫), ১৮ জানুয়ারি তেজগাঁওয়ে আবদুল আজিজ (১৮), ১ জুলাই আদাবরে শিপন (১৫), ২২ আগস্ট মিরপুরে কবির হোসেন (২১), ৬ অক্টোবর কদমতলীতে শিপন (২০) এবং সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর চকবাজারে মোহাম্মদ হাসান (১৬) মারধর ও ছুরিকাঘাতে খুন হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ১৬৬ জন খুন হয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একের পর এক উঠতি বয়সী শিশু, কিশোর ও তরুণরা খুনোখুনির খেলায় মেতে উঠছে। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার মিলছে না। কার্যত পারিবারিকভাবে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারায়, আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকায় এবং পাড়া কিংবা মহল্লায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি না থাকায় এসব ঘটেই চলেছে। যে বয়সে ছেলেদের খেলাধুলা, পড়াশোনা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দে মেতে থাকার কথা, সে বয়সেই তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে। মাদক সেবন, আধিপত্য বিস্তার ও গ্রুপ গঠন নিয়ে প্রায়ই সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। খুন করতেও কুণ্ঠাবোধ করছে না তারা। ফলে জীবনের শুরুতেই হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে উঠছে এসব শিশু-কিশোর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর