রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
স্বাধীনতা ঘোষণা ইস্যু

কাতালান সরকারের দায়িত্ব নিল স্পেন

প্রতিদিন ডেস্ক

সংবিধানের আলোকে কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে দিয়ে সেখানকার সরকারের দায়িত্ব নিয়েছে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার। কাতালান সরকারের প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজেমন্তসহ সব সদস্যকে বরখাস্ত করে আঞ্চলিক সরকারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্পেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী সোরাইয়া সনজ দে সান্তামারিয়াকে। গতকাল স্পেন সরকারের এক বুলেটিনে এসব পদক্ষেপের কথা জানানো হয়। শুক্রবার কাতালোনিয়ার পার্লামেন্টে একতরফাভাবে অঞ্চলটির স্বাধীনতা ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এসব পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাতালানদের দিক থেকে নিশ্চিতভাবেই কঠিন বাধার মুখে পড়বে। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষের মধ্যে সহিংস সংঘাতের আশঙ্কা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে বলে রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মত।

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ শাসন আরোপের হুমকির মুখে বৃহস্পতিবার কাতালান পার্লামেন্ট এক বিশেষ অধিবেশনে বসে। এর পরদিন শুক্রবার স্পেন থেকে একতরফাভাবে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা প্রশ্নে পার্লামেন্টে বিভিন্ন দলীয় সংসদ সদস্যদের মাঝে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়। পরে এক গোপন ভোটে স্বাধীনতার পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদদের ভোট পড়ায় (পক্ষে-বিপক্ষে ৭০-১০ ভোট) স্বাধীনতা ঘোষণা করে পার্লামেন্ট। এর কিছুক্ষণ পরই কাতালোনিয়ার ওপর সরাসরি শাসন আরোপের প্রশ্নে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোইর সরকারের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট।

 

সিনেটের অনুমোদন পাওয়ার পর শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো কাতালান পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ও অঞ্চলটির নেতা কার্লেস পুজেমন্তকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে সেখানে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। আগামী ২১ ডিসেম্বর এ নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্পেন সরকার। সে সঙ্গে পুলিশের প্রধান জোসেফ লুই ত্রাপেরো (যিনি ইতিমধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কেন্দ্রের মামলার মুখোমুখি) ও মহাপরিচালক পেরে সোলের ই কাম্পিন্সসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করে অঞ্চলটির পুুলিশের দায়িত্ব নেয় স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে, স্বাধীনতার ঘোষণার পরপরই কাতালান প্রেসিডেন্ট (বরখাস্ত) কার্লেস পুজেমন্ত সমর্থকদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে এই মুহূর্ত বজায় রাখেন। তবে স্পেনের সরকারি কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, তারা প্রেসিডেন্ট পুজেমন্তের বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহে বিদ্রোহের অভিযোগ আনতে পারেন। এ ছাড়া স্পেনের সাংবিধানিক আদালত কতালোনিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাকে অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। উল্লেখ্য, আদালতটি স্বাধীনতার প্রশ্নে অনুষ্ঠিত গণভোটকেও অবৈধ ঘোষণা করেছিল। তবে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাপন্থিদের বক্তব্য, স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় অঞ্চলটি আর স্পেনের কর্তৃপক্ষের আওতায় নেই। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার কেবল সংবিধানের ১৫৫ ধারা ব্যবহার করেই সংকটের সমাধান আনতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিচ্ছিন্নতাপন্থি সংগঠন ‘কাতালান সলিডারিটি ফর ইন্ডিপেনডেন্স’র আন্তর্জাতিক শাখার সেক্রেটারি এনরিক ফলচ। তিনি বলেন, ‘স্পেন কর্তৃপক্ষ আর্টিকল ১৫৫’র মাধ্যমে অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিতে চায়। তবে যেহেতু কাতালোনিয়া স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (গণভোটের প্রসঙ্গ তুলে) তাই প্রকৃতপক্ষে অঞ্চলটিতো আর স্বায়ত্তশাসিত নয়।’ তার ভাষায়, ‘স্পেন কর্তৃপক্ষ এখন কেবল একটি কাজই করতে পারে তা হলো শক্তি প্রয়োগ।’ বিবিসি, রাশিয়া টুডে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর