মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাতারবাড়ীতে সমুদ্রবন্দরের প্রস্তাব, চবকের না

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে যে মালপত্র আনা হবে, সেসব লোড-আনলোডের জন্য ওই এলাকাটিতে বন্দর সুবিধা চাইছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ জন্য তারা মাতারবাড়ীকে ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, মাতারবাড়ী সমুদ্র এলাকাকে ‘পোর্ট অব কল’ হিসেবে ঘোষণা করা হলে প্রথমে একে বন্দর হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া বন্দরের সীমানা সরকার কর্তৃক গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। কাস্টমস ল্যান্ডিং স্টেশন ও বন্ডেড এরিয়া ঘোষণার বিষয়টিও বন্দরের সঙ্গে জড়িত।

সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে মহেশখালী, মাতারবাড়ী, কুতুবদিয়া, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এলাকায় সরকারি এবং বেসরকারি ভিত্তিতে বিভিন্ন সামুদ্রিক স্থাপনা ও টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাবগুলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃক প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগ মাতারবাড়ীকে ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণার অনুরোধ জানিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে বলেছিল, সেখানে (মাতারবাড়ী) কোল পাওয়ার জেনারেশন কো. বাংলাদেশ লিমিটেড ৬০০ মেগাওয়াট করে মোট ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। ‘কোল ফায়ার্ড আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ’ প্রকল্পের এই কাজ বাস্তবায়নে কার্যাদেশ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের মালামাল প্রকল্প এলাকায় আনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আর এসব মালামাল মাতারবাড়ীতে লোড-আনলোড করার জন্যই ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। মাতারবাড়ীতে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে তাতে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। সংস্থাটি সেখানে দেশের বৃহত্তম কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করতে গিয়ে বহুমুখী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্রগুলো জানায়, জাইকা কর্তৃক মাতারবাড়ীতে বহুমুখী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালিত হচ্ছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর সার্বিক দিক বিবেচনা করে বন্দর নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে জাইকা। জানা গেছে, জাপানের অর্থায়নে মাতারবাড়ীতে যে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে ওই প্রকল্প থেকেই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ভিত্তি রচিত হয়। জাইকার প্রাথমিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা যে পরিকল্পনাটি করেছে সেটি তিনটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। যার মধ্যে প্রথম ধাপে ২০২০ সালের মধ্যে গড়ে তোলা হবে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লা জেটি ও হারবার। ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বে গভীর সমুদ্রবন্দরের উপযোগী করে বন্দর সম্প্রসারণ করা হবে এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। তৃতীয় পর্বে ২০৩৫ সালের মধ্যে গড়ে তোলা হবে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, প্রাথমিক এনার্জি সংশ্লিষ্ট শিল্প-কারখানা, পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং বিগ-বি উদ্যোগ বা আন্তর্জাতিক উন্নয়নে মাতারবাড়ীকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে হাইওয়ে ও রেল কানেকটিভিটি স্থাপন করা হবে।

সর্বশেষ খবর