বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দিনে ৩০০ জন ফেরত নেবে মিয়ানমার!

দেশে ফিরে যাওয়া মৌলিক অধিকার : ইইউ, ফের নৌকা ডুবে সাত লাশ উদ্ধার

ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

দিনে ৩০০ জন ফেরত নেবে মিয়ানমার!

প্রতিদিন ৩০০ করে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু হলেও এখনো থামছে না বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা স্রোত। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে আবারও নৌকাডুবির ঘটনায় পাঁচ শিশুসহ সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ার বঙ্গোপসাগরের উপকূলে পৃথক এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে লাশগুলো উদ্ধার করা হলেও একটি নৌকা রোহিঙ্গাবোঝাই অবস্থায় সোমবার শেষরাতের দিকে ডুবে গিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। নিহতের মধ্যে এক নারী ও ছয় শিশু রয়েছে। দুই নৌকার শখানেক যাত্রীর মধ্যে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৫৯ জনকে।

প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গা ফেরত নেবে মিয়ানমার : প্রতিদিন ৩০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে মিয়ানমার সরকার। তুংপিও লিতওয়ে এবং এনগা খু ইয়া গ্রামের দুটি তল্লাশি চৌকির মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এরপর পুনর্বাসন করা হবে মংডু শহরের দার গি জার গ্রামে। এ প্রক্রিয়ায় ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত দুই দেশের মধ্যকার শরণার্থী প্রত্যাবাসন চুক্তির চারটি প্রধান মূলনীতির অধীনে শরণার্থীদের সূক্ষ্ম নিরীক্ষণের প্রয়োজন আছে বলে উল্লেখ করেছে মিয়ানমার। গতকাল মিয়ানমারভিত্তিক দ্য ইরাবতির খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইউ মিয়েন্ত কিয়াইং বলেন, ‘আমরা একটি সীমান্ত তল্লাশি চৌকিতে এক দিনে ১৫০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করতে পারি।’ তবে দুই দেশের স্বাক্ষরিত ১৯৯২ সালের শরণার্থী প্রত্যাবাসন চুক্তিতে সংশোধন চায় বাংলাদেশ। এ সম্পর্কে ইউ মিয়েন্ত কিয়াইং বলেন, ‘প্রধান চার মূলনীতির পরিবর্তন হবে না। চুক্তির অধীনে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলেও আরও অতিরিক্ত পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে।’ শরণার্থীদের ফেরাতে দুই দেশের মাঝে সমঝোতা স্মারক সইয়ের ব্যাপারে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি। চুক্তির প্রধান চার মূলনীতিতে বলা আছে, ফিরতে হলে শরণার্থীদের প্রমাণ দেখাতে হবে যে তারা মিয়ানমারের বাসিন্দা, প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায়, যেসব শিশুর জন্ম শরণার্থী শিবিরে তাদের পিতা-মাতাকে অবশ্যই মিয়ানমারে বসবাস করতে হবে, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শরণার্থীদের বাংলাদেশের আদালত থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করে তা দেখাতে হবে। এদিকে, আরাকানে ৭ হাজার রোহিঙ্গাকে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। দেশে ফিরে যাওয়া মানবাধিকার—ইইউ : রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের ধরনকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে পুনরুল্লেখ করেছেন সফররত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিরা। ইইউর মানবিক সহায়তা ও সংকট ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টোস  স্টেলেনডিয়াসের নেতৃত্বাধীন ১৫ সদস্যের ইইউ প্রতিনিধি দল গতকাল কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় এ মন্তব্য করেন। প্রতিনিধিরা মূলত এ সি এফ পরিচালিত পুষ্টি কেন্দ্রে যান এবং  রোহিঙ্গা শিশু ও প্রসূতি নারীদের জন্য পুষ্টি কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। পরে কুতুপালং ক্যাম্পে শিশুদের পাঠদান পরিদর্শন শেষে কমিশনার ক্রিস্টোস সাংবাদিকদের বলেন, নিজ দেশে  ফেরাটা রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার।

 তাই মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে।  রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে কাজ করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ সময় রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের মহানুভবতার প্রশংসা করে বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও সুরক্ষায় অর্থ সহায়তা দেবে ইইউ।

গতকাল সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যান প্রতিনিধিরা। আজ সকালে ঢাকায় ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আজ বিকালেই ইইউ প্রতিনিধি দলটির ঢাকা ত্যাগ করার সূচি রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর