বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমান বিএনপির সাখাওয়াত না তৈমূর

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমান বিএনপির সাখাওয়াত না তৈমূর

জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর)। পুরো জেলার রাজনীতি ঘুরপাক খায় এ আসনকে কেন্দ্র করে। তাই এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে মরিয়া হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, এ আসনের মনোনয়ন পেতে সংশ্লিষ্ট দলের প্রার্থীদের প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজধানী ঢাকার খুব কাছাকাছি হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ শহরের এ আসনটি দখল করতে পারলেই যে কোনো রাজনৈতিক দলের শক্ত ভিত তৈরি করা সহজ হয়। এখানে ওসমান পরিবার অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাই বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামী কোনো দলই এ পর্যন্ত এ আসনে ওসমান সাম্রাজ্যকে টলাতে পারেনি। স্পর্শকাতর এ আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন বা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করে। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে ছয় মাস আগে থেকেই এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির ১০-১২ জন প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ব্যানার-পোস্টার টানিয়ে চালাচ্ছেন সর্বত্র প্রচার-প্রচারণা।

এ আসনে আওয়ামী লীগের রয়েছে ভিন্ন হিসাব। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়। তাই আগামীতে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে এলে এ আসনে আওয়ামী লীগের কারও মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান। সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বন্দরে প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের নামে একটি স্কুল উদ্বোধনে এসে সেলিম ওসমানকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা দিয়ে যান। সেলিম ওসমানকে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের বৃহৎ অংশ, বিএনপির একটি অংশ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুই ডজন কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ীরা সমর্থন দিয়েছেন। এই সংসদ সদস্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, স্কুল নির্মাণ, নদী পারাপারে ফ্রি টোলসহ ১৫ কোটি টাকা দান করেছেন। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করেন, ওসমান পরিবারের সদস্য শহর আসনে সংসদ সদস্য থাকায় আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির বাইরে কোনো দল এখানে রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করতে পারছে না। সেলিম ওসমান জাতীয় পর্টির এমপি হলেও তার রাজনীতি পরিচালিত হয় আওয়ামী লীগের চিন্তা-ভাবনায়। তবুও এ আসনে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরজু রহমান ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আনিসুর রহমান দীপু। এ ছাড়া নাগরিক ঐক্য থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সাবেক এমপি এস এম আকরাম। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ আসনে বিএনপি চোখ রাখছে কে হবেন সরকারদলীয় প্রার্থী। সেটি বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারণ করা হবে বিএনপির প্রার্থী। মূলত ওসমান পরিবারের সাংগঠনিক ক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো প্রার্থীর খোঁজে রয়েছে বিএনপি। তবে মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় এ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) গত নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। ইতিমধ্যে জেলার রাজনীতিতে তিনি শক্ত অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। এ ছাড়া মহানগর যুবদল সভাপতি নাসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। গত দুটি নাসিক নির্বাচনে এই প্রার্থী কাউন্সিলরদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সভাপতি সাবেক এমপি আবুল কালাম। তৈমূর আলম খন্দকারও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

সর্বশেষ খবর