বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ, রোগীদের দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ, রোগীদের দুর্ভোগ

তখন বেলা সাড়ে ১১টা। খাদিজা আক্তার তার পাঁচ বছরের মেয়েকে ডাক্তার দেখাবেন। মা-মেয়ে এসেছেন নাজিমুদ্দিন রোডের বাসা থেকে। শিশু সাদিয়ার গত চার দিন যাবত জ্বর-সর্দি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এসে দেখেন বহির্বিভাগ বন্ধ। আনসার ও আশপাশের মানুষের কাছে জানতে পারেন চিকিৎসকদের আন্দোলনে বন্ধ আছে বহির্বিভাগের সেবা। রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকদের মারামারির জের ধরে গতকাল সকাল থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ পাঁচদফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ঢামেক হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসকরা। এ সময় বন্ধ রাখা হয় হাসপাতালটির বহির্বিভাগের সেবা। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর বেলা আড়াইটায় স্থগিত করা হয় আন্দোলন। সরেজমিন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হয় বহির্বিভাগের চিকিৎসা সেবা। এরই মধ্যে দেড় শতাধিক টিকিটও বিক্রি হয়। টিকিট নিয়ে ডাক্তার দেখাতে লাইনে দাঁড়ান রোগীরা। ১০-১২ জনের দেখানো শেষে সকাল ৯টার দিকে বহির্বিভাগের সামনে অবস্থান নেন ইন্টার্নসহ শতাধিক চিকিৎসক। এ সময় তারা বহির্বিভাগের গেট বন্ধ করে পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। বিক্ষোভকালে তাদের হাতে ‘বিচার চাই, দোষীদের বিচার চাই, চিকিৎসা দেব আমরা, তবে মোদের নিরাপত্তা  দেবে কারা? হাসপাতালে দর্শনার্থী প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ চাই’ লেখা সংবলিত প্লাকার্ড ছিল। এই কর্মসূচিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতালের অনারারি মেডিকেল অফিসারসহ (এইচএমও) অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কর্মস্থলে ফিরবেন না চিকিৎসকরা।’ আন্দোলন চলাকালে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন সহস্রাধিক রোগী।

তবে জরুরি বিভাগের ফটকের পাশে টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী- প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বহির্বিভাগের সেবা নেন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মানুষ। বহির্বিভাগের অনেকেই জরুরি বিভাগের ডাক্তার দেখানোর আশায় ভিড় করতে থাকেন ফটকের সামনে। এই পরিস্থিতিতে ফটকের কলাপসিবল গেট বন্ধ রেখে সাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করেন আনসার সদস্যরা। এখানেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের। তারা দীর্ঘসময় ধরে বাইরে অপেক্ষা করেছেন হাসপাতালের বেডে ভর্তির জন্য। ভাঙ্গা হাত-পা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে ছিলেন কয়েকজন। অন্যদিকে ভর্তি থাকা রোগীর স্বজনদের কাউকে দর্শনার্থী কার্ড ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

সাভার থেকে এক বছরের শিশুসন্তান জাকিরকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তার বাবা-মা। তারা জানান, তাদের ছেলে পায়খানার সমস্যায় ভুগছে। বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় তাদের আগামী সপ্তাহে আসতে বলা হয়েছে। কদমতলী থেকে শফিউর নামে এক রোগী এসেছিলেন মেডিকেল রিপোর্ট দেখাতে। তিনি আলসারের সমস্যায় আক্রান্ত। বহির্বিভাগে রিপোর্ট দেখাতে না পেরে তিনি জরুরি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন।

দুপুর আড়াইটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে কর্মসূচি স্থগিত করে আন্দোলনকারীরা। এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে হাসপাতাল, কলেজ, বিএমএ ও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক জানান, আমাদের দাবি ৭ দিনের মধ্যে পূরণে আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। দাবি পূরণ না হলে, পরর্বতীতে নতুন করে কর্মসূচি দেওয়া হবে। 

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাছির উদ্দিন, কলেজ অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, বি এম এ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও ঢামেক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ডা. ইউসুফ ফকির।

আন্দোলনরত এক ইন্টার্নি চিকিৎসক জানান, শনিবার ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় হৃদরোগে আক্রান্ত এক ব্যক্তি ভর্তি হন। পরদিন তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনরা দায়িত্বরত চিকিৎসকদের মারধর করেন। এ সময় আবাসিক চিকিৎসক শামীমুর রহমান শামীমের হাত ভেঙে যায়।

জানা গেছে, গতকাল সাড়ে ৪টার দিকে ওই চিকিৎসককে দেখতে যান বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এ সময় তিনি বলেন, চিকিৎসকদের সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ দাবি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও বিএমএ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর