শুক্রবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বড় পরিবর্তন আসছে না সীমানায়

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, যুক্ত হচ্ছে ছিটমহল ও নতুন প্রশাসনিক এলাকা, আইনি জটিলতায় ইসি

গোলাম রাব্বানী

বড় পরিবর্তন আসছে না সীমানায়

বড় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না সংসদীয় আসনের সীমানায়। তবে যে আসনে প্রশাসনিক অখণ্ডতা বজায় নেই সেসব আসনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ ছাড়া বিলুপ্ত ছিটমহল এবং নতুন উপজেলা বা প্রশাসনিক এলাকা বিভিন্ন সংসদীয় আসনে যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। যে সব সংসদীয় আসনের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা আসবে তাও প্রতিপালন করবে ইসি। সেই সঙ্গে বড় বড় সিটিতে আসন নির্দিষ্ট করা যায় কি না তাও ভাবছে ইসি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে নতুন আইন তৈরির কাজও এগিয়ে নিচ্ছে কমিশন। তবে ভোটার ও জনসংখ্যার সমতা ভিত্তিতে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টির শঙ্কাও করা হচ্ছে। এতে বড় বড় শহরে আসন সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং ছোট জেলায় আসন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ইসির কর্মকর্তারা। তাই নতুন আইনে দশম সংসদের সীমানা বহাল রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি রাখা হচ্ছে।

অন্যদিকে সদ্যসমাপ্ত সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল সীমানা পরিবর্তনের বিপক্ষে মত দিয়েছে। আর বিএনপি আসনের পরিবর্তন চেয়েছে। এজন্য দলের বিষয়টিও ইসির বিবেচনায় রয়েছে। কিন্তু অল্প সময়ে সংসদীয় আসনের সীমানা ব্যাপক পরিবর্তন করে সময় মতো সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ইসির জন্য কষ্টকর হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।

জানা গেছে, ২০০৮ ও ২০১৩ সালের সীমানা নির্ধারণের সময় যেসব আসনের প্রশাসনিক অখণ্ডতা বজায় রাখা হয়নি বা ভৌগোলিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এমন আসনে এবার পরিবর্তন আনা হবে। অভিযোগ রয়েছে, এর আগে ২০১৩ সালে সীমানা নির্ধারণের সময় অনেক আসনে জনসংখ্যার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অনেক আসনের সীমানা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রয়ে গেছে কুমিল্লা-১০ আসনের সীমানা। এ আসনের সীমানা শুরু হয়েছে ফেনী জেলার দাগনভূইয়া থেকে আর শেষ হয়েছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ীতে এসে।

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদ্যমান ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশটি বাদ দিয়ে নতুন আইনের খসড়া করা হয়েছে। এখন তা পর্যালোচনার কাজ চলছে। প্রস্তাবিত আইনে আদম শুমারির প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্যবর্তী সময়কালে আগের সীমানায় ভোট করার বিধান রাখা হয়েছে। সে হিসেবে দশম সংসদ নির্বাচনের সীমানা বহাল রেখেই একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ রাখা হচ্ছে আইনের খসড়ায়। ইতিমধ্যে ‘জাতীয় সংসদ  নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০১৭’ এর খসড়া নির্বাচন কমিশন সভায় উপস্থাপিত হয়েছে। তা আরো পরিমার্জনের কাজ করছে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি। এজন্য একজন পরামর্শকও নিয়োগ করেছে ইসি। কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি নির্বাচনী আইন সংস্কার, সীমানা পুনর্নির্ধারণসহ সাতটি আলোচ্যসূচি নিয়ে সংলাপ করেছে। সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়েছে ইসি। সূত্র জানিয়েছে, জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা ও সংসদীয় এলাকার আয়তনের ভিত্তিতে ভৌগোলিক অখণ্ডতা, প্রশাসনিক সুবিধা ও  যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনায় রেখে ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্স, ১৯৭৬’ রহিত করে বাংলা প্রণীত ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০১৭’ এর খসড়া উপস্থাপন তৈরি হয়েছে। আইন প্রণয়নের পর সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিধিমালা খসড়া করবে ইসি।

আইনের খসড়া : দুই পর্যায়ে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। ধারা ৬ এ বলা হয়েছে-ক. আসনসমূহ ভোটার সংখ্যা এবং জনসংখ্যার সমবিভাজনের ভিত্তিতে প্রথমে জেলা পর্যায়ে বণ্টন এবং খ. বণ্টনের পর জেলাগুলোয় বরাদ্দকৃত আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ। সর্বশেষ আদম শুমারির ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশের ১ বছরের মধ্যে সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করতে হবে। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে  ভোটের তফসিল হলে নির্বাচন পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করতে হবে। আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, সর্বশেষ আদম শুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ হওয়ার পর হতে পরবর্তী আদম শুমারি প্রতিবেদন প্রাপ্তির মধ্যবর্তী সময়কালে বা ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে চূড়ান্তভাবে প্রকাশের পর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হলে এটা সর্বশেষ নির্ধারিত সীমানার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে কমিশন নির্বাচনী এলাকার আয়তন ও অবস্থান হুবহু ঠিক রেখে শুধু প্রশাসনিক এলাকার পরিবর্তনগুলো অন্তর্ভুক্ত করে বিজ্ঞপ্তি আকারে সরকারি গেজেট প্রকাশ করবে।

দশম সংসদের সীমানায় একাদশ সংসদের ভোট! : ২০১১ সালে সর্বশেষ পঞ্চম আদম শুমারি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিদ্যমান অধ্যাদেশ অনুযায়ী জনসংখ্যার যথাসম্ভব সমতা রেখে দশম সংসদ নির্বাচনে আদম শুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসন বিন্যাস করা হয়। প্রতি ১০ বছর অন্তর হওয়ায় পরবর্তী আদম শুমারি প্রতিবেদন হবে ২০২১ সালে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত আইন পাস হলে একাদশ সংসদ নির্বাচন বিদ্যমান সীমানাতেই হতে পারবে। এ ছাড়া যে সব আসনে প্রশাসনিক অখণ্ডতা বজায় নেই, বিলুপ্ত ছিটমহল ও নতুন উপজেলা বা প্রশাসনিক কিছু এলাকা সংসদীয় আসনের যুক্ত করেই গেজেট প্রকাশ করবে ইসি। সেক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনার দরকার পড়বে না। এর আগে ২০০১ সালেও ১৯৯৫ সালের সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। ১৯৮৪, ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে ১৩৩ সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। দশম সংসদে ছয়টি নীতিমালা অনুসরণ করে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন করে আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়।

সর্বশেষ খবর