শুক্রবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
তাদের চোখে জেলহত্যা

মুজিব ভাই স্বপ্নে বললেন তাজউদ্দীন তুমি চলে আসো : রিমি

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

মুজিব ভাই স্বপ্নে বললেন তাজউদ্দীন তুমি চলে আসো : রিমি

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের স্মৃতিচারণা করে আবেগঘনভাবে কিছু কথা বলেন তার মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি এমপি। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ওই সময় আমি নবম শ্রেণির ছাত্রী।’

এমপি রিমি বলেন, ‘আজ থেকে ঠিক ৪২ বছর আগে এই দিনে হারালাম প্রিয় বাবাকে।

আমরা ভাই-বোনেরা তখন ছোট। সবার ছোট ছিল সোহেল। আমরা বোনদের সঙ্গে বাবার কিছু স্মৃতি থাকলেও ছোট ভাই সোহেলের সঙ্গে ছিল খুবই কম। সোহেল তখন পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু।’ বুধবার গাজীপুরের কাপাসিয়া ডাকবাংলোতে বসে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বঙ্গতাজকন্যা রিমি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাবাকে গৃহবন্দী করা হয়। তারপর গৃহবন্দী অবস্থা থেকে আমার বাবা তাজউদ্দীনকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওনাকে কোথায় নিয়ে গেছে আমরা তখন জানতাম না। পরে খবরের কাগজে পড়ি, বাবাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে গেছে। আমরা গৃহবন্দী ছিলাম প্রায় এক মাস। বাবার সঙ্গে জেলখানায় সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে দেখা হয়। পরে, আমার মনে আছে, অক্টোবরের ২৪ বা ২৫ তারিখে সর্বশেষ বাবার সঙ্গে দেখা হয়। আমরা যাই দেখা করতে। তখন জেলের ভিতর প্রবেশের পর বাবা বলেন, “আমাদের আর বাঁচিয়ে রাখবে না”। এটা বলে তিনি একটু হেসে বললেন, “মুজিব ভাইকে আমি স্বপ্নে দেখেছি। উনি বলছেন, তাজউদ্দীন, তুমি চলে আসো। তুমি ছাড়া আমার ভালো লাগে না”।’ এমপি রিমি বলেন, ‘বাবার এই আটকাদেশের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যেদিন ওনাকে কবর দেওয়া হয়, অর্থাৎ ৫ নভেম্বর, সেদিন রিট পিটিশনটা হাই কোর্টে ওঠার কথা ছিল।’

তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্টের পর ঢাকার পরিবেশ ছিল অন্য রকম। এর মধ্যে আবার বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত কাছের চার নেতাকে জেলে বন্দী করা হয়। সব মিলিয়ে ঢাকার চিত্র ছিল থমথমে। ঠিক ৩ নভেম্বর সকালবেলায় ফাইটারের শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। প্রচণ্ড শব্দ। মনে হচ্ছে বাসার সামনে ভেঙে পড়বে ফাইটার। তখন তো এমনিতেই একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তো আমরা একেবারেই স্বস্তিতে ছিলাম না। আর আমাদের ফোন লাইনসহ সবকিছুর লাইন কাটা ছিল ১৫ আগস্ট থেকে। আমরা আশপাশের বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করি। কেউ কিছু জানে না। কী হচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালবেলা শোনা গেল, জেলখানায় গোলাগুলি হয়েছে। তো জেলখানায় গোলাগুলি হয়েছে শুনেও অনেক জায়গায় যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারে না। পরে বেলা সাড়ে ৩টা বা ৪টার দিকে আমি আবার ফোন করার জন্য আমাদের বাসার পেছনের দিকে ১৯ নম্বর বাসায় যাই। যাওয়ার সময় দেখি, আমাদের বাসার সামনে মানুষের ভিড়। এর পরও আমি কিছু বুঝতে উঠতে পারিনি। আমি যখন বাসার সামনে আসি, তখন দেখি হাজার হাজার মানুষ। রাস্তায় কোনো গাড়ি চলছে না। তখন শুনি, মানুষ বলছে, “আমরা আমাদের নেতার লাশ চাই”। আমি বাসায় যাচ্ছি। যখন বাসার গেটে যাই ঠিক তখন আব্বার ছোটবেলার বন্ধু ডা. করিম আর ফকির সাহাব উদ্দিন আহমদকে দেখতে পাই। তারা দুজন আমার সঙ্গে বাসায় ঢোকেন। তারা বাসায় ঢুকে আম্মুকে বলেন, তাজউদ্দীন ভাই আর নেই। আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ি।’

সর্বশেষ খবর