শুক্রবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সঞ্চয়পত্রে গ্র্যাচুইটির টাকা বিনিয়োগ নয়

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সঞ্চয়পত্রে গ্র্যাচুইটি ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সেই বিভ্রান্তি কাটাতে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, গ্র্যাচুইটির টাকা এতদিন সঞ্চয়পত্রে যে বিনিয়োগ হয়েছে, সেটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে। এ সুযোগ আর দেওয়া হবে না।

ইতিমধ্যে আয়কর বিধিমালা, ১৯৮৪ অনুসরণ করে অনেকেই গ্র্যাচুইটি ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। সঞ্চয়পত্র অধিদফতরও ওই বিনিয়োগ গ্রহণ করেছে। এখন বলা হচ্ছে, যদি কেউ গ্র্যাচুইটির টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে থাকেন, তবে সেটি তার নিজের ভুল। আইনের ভুল নয়। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র বিধিমালা, ১৯৭৭ অনুযায়ী গ্র্যাচুইটির টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ একটি পরিপত্র জারি করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের বিষয়টি স্পষ্ট করতে পরিপত্র জারির এখতিয়ার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের। এ ব্যাপারে যা করার তারাই করবে। সভায় উপস্থিত অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, ডাক অধিদফতর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর-এর প্রতিনিধি সবাই একমত হন যে, আয়কর বিধিমালা, ১৯৮৪ এবং সঞ্চয়পত্র বিধিমালা, ১৯৭৭-এর কোনো ধারা, উপধারা একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। ভুল বোঝাবুঝির কারণে ইতিপূর্বে কিছু প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয়পত্রে যথাযথ বিনিয়োগ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি জানান, আয়কর বিধিমালা, ১৯৮৪ এবং সঞ্চয়পত্র বিধিমালা, ১৯৭৭ আলাদা ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বিধিমালায় কোনো অস্পষ্টতা নেই। যদি বিনিয়োগকারী ভুল করে থাকেন, তাহলে তা হয়েছে সব বিধান যথাযথভাবে না জানার কারণে। এর আগে বিধিমালা দুটির অসামঞ্জস্যতার বিষয়ে সভায় জানানো হয়, সঞ্চয়পত্র বিধিমালা, ১৯৭৭-এর বিধি ৫ অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য কোনো সঞ্চয় স্কিমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের সুযোগ নেই। তবে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ব্যক্তিশ্রেণির পাশাপাশি স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সভায় আরও জানানো হয়, আয়কর বিধিতে প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো গ্র্যাচুইটি ফান্ড ও পেনশন ফান্ডের অর্থ পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে। যা সঞ্চয়পত্র বিধিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগের সুযোগ নেই।

সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর-এর প্রতিনিধি জানান, প্রতিটি আইনের উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতার ক্ষেত্র আলাদা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গ্র্যাচুইটি ফান্ড অনুমোদনের ক্ষেত্রে আয়কর আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করে থাকে। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একজন বিনিয়োগকারীকে সঞ্চয়পত্র বিধিমালা, ১৯৭৭-এর প্রযোজ্য সব বিধান অনুসরণ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর