শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাকবিতণ্ডার মধ্যে শেষ হলো বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বড় অগ্রগতি নেই

নিজামুল হক বিপুল, বন (জার্মানি) থেকে

আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি ছাড়াই গতকাল শেষ হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার গভীর রাতে রাইন নদীর তীরে ইউএন সদর দফতরের সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্বের ১৯৭টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধির বাকবিতণ্ডার মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে। এবারের সম্মেলনে ২০২০ সালের পর থেকে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নে পাঁচটি ইস্যুকে অগ্রাধিকার দিয়ে রোলস বুক তৈরির জন্য সম্মেলনের শুরুর দিন থেকে নেগোসিয়েশন শুরু করে সদস্য রাষ্ট্রগুলো। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে আশার কথা হচ্ছে, এবারের সম্মেলনে কৃষি এবং জেন্ডার ইস্যুতে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। এবারের সম্মেলনে ইউএনএফসিসিসি একটি জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ইউএনএফসিসিসির সাবসিডিয়ারি বডি ফর ইমপ্লিমেন্টেশন এ বিষয়ক প্রস্তাবনা জলবায়ু সম্মেলনের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রেরণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, নির্গমন হ্রাস এবং প্রাসঙ্গিক অর্থায়ন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও হস্তান্তর এবং দক্ষতা উন্নয়ন— এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জেন্ডার সংবেদনশীল নীতি গ্রহণের কথা এই জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যানে (গ্যাপ) বলা হয়েছে।

গ্যাপে ইউএনএফসিসিসির সব প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবনায় সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, পর্যবেক্ষক ও অন্যান্য অংশীদারদের এই গ্যাপ বাস্তবায়নের জন্য জোর আহ্বান জানানো হয়েছে। জলবায়ু সম্মেলনের ২৫তম অধিবেশনে এই গ্যাপের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যানে পাঁচটি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো— দক্ষতা উন্নয়ন, জ্ঞান বৃদ্ধি ও যোগাযোগ; জেন্ডার সমতা, অংশগ্রহণ ও নারীর নেতৃত্ব; জেন্ডারবিষয়ক ম্যান্ডেট, কার্যক্রম ও বাস্তবায়নে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠা; জেন্ডার সংবেদনশীল কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং মনিটরিং ও রিপোর্টিং।

উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে আগামী দুই বছরের জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। একইভাবে এবারের সম্মেলনের আরেকটি বড় অর্জন হচ্ছে দীর্ঘ পাঁচ বছরের কারিগরি এবং রাজনৈতিক তর্কবিতর্ক ও আলোচনা শেষে ইউএনএফসিসিসির সদস্য রাষ্ট্রসমূহ কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছে। এই ঐকমত্যে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য এ সিদ্ধান্ত এক ঐতিহাসিক বিজয়। এ সিদ্ধান্ত এবারের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৩) চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের একদিকে রয়েছে কীভাবে কৃষি প্রতিবেশ (এগ্রোইকোলজিক্যাল জোন) অঞ্চলভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি, কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের সঙ্গে অভিযোজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সেই বিষয়। অন্যদিকে রয়েছে কীভাবে কৃষি খাত থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড ব্যতীত অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমানো যায়। এদিকে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, আমরা এ সম্মেলনে এলাম, অনেক বিষয়ে যে তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে এটাই অগ্রগতি। তিনি বলেন, প্রত্যাশার জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু সম্মেলনে সবাই ঝুঁকিতে আছে। কেউ যদি বলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, তাদের এ বিষয়ে আরও পড়াশোনা করতে হবে। আমরা যে কোনো না কোনোভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি সেটাই সম্মেলনে তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোজন তহবিলে উন্নত বিশ্বের প্রতিশ্রুত অর্থায়ন না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নত দেশ যত টাকা কমিট করে সেটা দেয় না। তিনি বলেন, এই সম্মেলনে আমরা অর্থ চাইতে আসিনি। আমেরিকাসহ সারা দুনিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এখানে সবার প্রয়োজনীয় অর্থের প্রয়োজন।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এই সম্মেলনে যতটা আশা করা হয়েছিল সে রকম অগ্রগতি হয়নি। বিশেষ করে অর্থায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতিটা খুবই শ্লথ। লস অ্যান্ড ড্যামেজের ক্ষেত্রে একই অবস্থা। তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, লস অ্যান্ড ড্যামেজের ক্ষেত্রে নেগোসিয়েশন লেভেলে বীমার বিষয়টি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 কিন্তু আমরা কখনই লস অ্যান্ড ড্যামেজের ক্ষেত্রে বীমার বিষয়টি ঢুকিয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিলাম না। অথচ এটিই নেগোসিয়েশন লেভেলে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন সেটি পলিটিক্যাল লেভেলে কোন পর্যায়ে যায় দেখার বিষয়। তিনি বলেন, এই সম্মেলনে উদ্বাস্তু ইস্যুটাই হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর বিষয়টি আগে যেভাবে সম্মেলনে ভাইটাল থাকত এবার সেটা নেই। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, সারা বিশ্ব থেকে এই সম্মেলনে যারা এসেছেন তাদের কারিগরি জ্ঞানটাই আমাদের কাছে মূল্যবান। এই কারিগরি জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েই আমরা আমাদের সক্ষম করে তুলব।

সর্বশেষ খবর