শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পবায় সবজি মেলে ১২ মাস

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

পবায় সবজি মেলে ১২ মাস

রাজশাহীর পবা উপজেলা। এই উপজেলা সবজির জন্য বিখ্যাত। সব ধরনের সবজির উৎপাদন হয়। যা দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। এক সময় মৌসুমভিত্তিক সবজির চাষ হতো। এখন মৌসুম আর নেই। সব সবজি মেলে ১২ মাস। বছর পাঁচেক আগেও দুই মৌসুমভিত্তিক সবজি চাষ করা হতো। গ্রীষ্মকালে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউসহ শীতপ্রধান সবজি পাওয়া যেত না। তবে এখন আর শীত বা গ্রীষ্মকালীন ‘প্রধান’ সবজি বলে কিছু নেই। এই উপজেলাতে বারো মাসই মিলছে প্রায় সব ধরনের তরতাজা সবজি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, রাজশাহীর এই উপজেলাটি একটু ব্যতিক্রম। সারা বছরই মাঠে থাকে পুঁইশাক, লালশাক, ঢেঁড়স, মূলা, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লতিরাজ কচু ও পালংশাকসহ অনেক সবজি। কৃষকরা বলছেন, মৌসুম ছাড়া এসব সবজির উৎপাদন কিছুটা কম হলেও দাম বেশি। এতে তারা লাভবান হচ্ছেন। কাঁচাপণ্যের পাইকারি বাজার নওহাটার ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজি গ্রীষ্মকালে আমদানি নির্ভর ছিল। কোল্ডস্টোর থেকেও কিছু আসত। কিন্তু মান তেমন ভালো হতো না। এখন সব তরতাজা। পবার বিভিন্ন এলাকা থেকে সারা বছরই আসে শীতের সবজি। সবজির পাইকার সাবিয়ার রহমান জানান, এই বাজারে বছরের প্রতিটি সময়ই সব ধরনের সবজি ওঠে। তারপর বেশিরভাগ সবজিই ট্রাকভর্তি করে চলে যায় রাজধানী ঢাকায়। কিছু কিছু অমৌসুমি সবজি যায় স্থানীয় বাজারেও। সেখান থেকে ক্রেতারা কিনতে পারেন। অমৌসুমে দু-একটা বাদে প্রায় সব সবজিই এখন পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে সবজির বাজারের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। লাউ চাষি কুরবান আলী বলেন, কৃষকরা এখন গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে বিশেষভাবে পলিথিন দিয়ে বৃষ্টি আড়াল করে শীতকালীন প্রায় সব সবজিই উৎপাদন করছেন। পাইকারি বাজারে এসব সবজির খুব চাহিদা। ভালো দামও পাওয়া যায়। এবার বন্যায় অনেকের সবজিখেত নষ্ট হওয়ায় দাম বেড়েছে আরও বেশি। ফলে যেসব কৃষকের সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, তারা এবার অধিক পরিমাণে লাভের হিসাব করছেন। দুই যুগ ধরে সবজির ব্যবসা করেন রাজশাহীর এমন অন্তত ১৫ জন পাইকার ও খুচরা সবজি বিক্রেতা জানান, ক্রেতাদের মাঝে সবজি কেনার আগ্রহও অনেক বেড়েছে। দাম একটু বেশি হলেও নতুন সবজি কমবেশি সবাই কেনেন। এখন আর আমদানি করা বা কোল্ডস্টোরের পুরনো সবজির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এখন এক হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে সবজি রয়েছে। এর মধ্যে পুঁইশাক ৭৫ হেক্টর, লালশাক ১৬৯ হেক্টর, মিষ্টি কুমড়া ২৫ হেক্টর, ডাঁটাশাক ৫৭ হেক্টর, কলমিশাক ৭ হেক্টর, চাল কুমড়া ৭২ হেক্টর, লাউ ৬২ হেক্টর, ঝিঙা ২০ হেক্টর, বেগুন ২৩২ হেক্টর, বাঁধাকপি ১৮ হেক্টর, ফুলকপি ৫ হেক্টর, মূলা ৩৭ হেক্টর, শিম ১১৪ হেক্টর, লতিরাজ কচু ১২ হেক্টর ও পালংশাক ৮ হেক্টর। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আবদুল আউয়াল বলেন, গেল কয়েক বছরে রাজশাহীর সবজি চাষে একটা বৈচিত্র্য এসেছে। কৃষকরা এখন অমৌসুমি সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কারণ, এই সবজির দাম ভালো পাওয়া যায়। এ জন্য কৃষকদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে অমৌসুমি সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এখন জেলার বেশকিছু কৃষক মৌসুম ছেড়ে অমৌসুমেই সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে অমৌসুমি সবজি চাষে ঝুঁকির কথাও জানালেন এই দফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী। তিনি বলেন, খুব সতর্কতার সঙ্গে অমৌসুমে সবজি চাষ করতে হয়। একটু অসতর্ক হলেই ফসল নষ্টের ভয় থাকে। তাই তারা অমৌসুমে চাষ করা সবজি খেতগুলোর দিকে সব সময় নজর রাখেন। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সেসব খেত পরিদর্শন করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর