শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

দুস্থ জেলেদের প্রণোদনা দেবে সরকার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নিহত জেলে পরিবার বা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেদের প্রণোদনা হিসেবে নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই প্রণোদনার মাধ্যমে সরকার দুস্থ জেলে পরিবারগুলোর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও জীবিকার ঝুঁকি কমাতে চায়। জানা গেছে, নগদ সহায়তায় এই প্রণোদনার পরিমাণ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে এরই মধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা করা হয়েছে। গত সপ্তাহে এর ওপর মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আইন বিভাগ।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) প্রফেসর শামসুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে যে অতিদরিদ্র শ্রেণি রয়েছে তার মধ্যে পড়ে জেলে সম্প্রদায়। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় তারা মাছ ধরতে পারে না। সেই সময় তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। এ ছাড়া কোনো জেলে দুর্ঘটনায় নিহত হলে সেই পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সেই দুস্থ ও অসহায় পরিবারটির সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

কারা পাবে এই প্রণোদনা : খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী জলাশয়ে মাছ ধরা অবস্থায় ঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, জলদস্যুদের হামলা বা বাঘ, কুমির, সাপ ইত্যাদির কামড়ে নিহত জেলে পরিবার অথবা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেরাই সরকারের এই প্রণোদনা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। বাংলাদেশের যে কোনো এলাকার জেলে পরিবার এই প্রণোদনা পাবে। তবে সহায়তার জন্য আবেদনকারী জেলেদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পাশাপাশি মৎস্য অধিদফতর থেকে নিবন্ধিত হতে হবে। আবেদনের সঙ্গে নিহত জেলের মৃত্যু সনদ এবং স্থায়ীভাবে অক্ষমতার পক্ষে মেডিকেল সনদ প্রদান করতে হবে। জলদস্যুদের হাতে নিহত হলে জেলে পরিবারকে স্থানীয় থানায় জিডি করে তার অনুলিপি আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে। নিহত বা স্থায়ীভাবে অক্ষম হওয়ার দুই মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলে বা তার পরিবারকে প্রণোদনার জন্য উপজেলা মৎস্য অফিসে আবেদন করতে হবে। নীতিমালায় যা বলা হয়েছে : দেশের প্রায় ১ কোটি ৮৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের ওপর নির্ভরশীল। জেলে সম্প্রদায় সবচেয়ে দরিদ্র্য শ্রেণির মধ্যে পড়ে। মাছ ধরা ছাড়া তাদের জীবিকার বিকল্প কোনো উৎস নেই। এমনকি মাছ ধরার জাল ও নৌকা কেনার সামর্থ্য এদের অনেকের নেই। তারা অনেকটা দিনমজুর হিসেবে মহাজনের নাও ও জাল দিয়ে মাছ ধরে। যখন মাছ ধরা বন্ধ থাকে তখন অর্ধাহারে, অনাহারে তাদের দিন কাটে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে মাছ ধরতে যেতে হয়। ফলে কখনো কখনো বড় দুর্ঘটনায় জেলেদের অনেকে প্রাণ হারায়। মাছ ধরার জন্য তারা যে নৌযান ব্যবহার করে তাতে আধুনিক জীবন রক্ষাকারী কোনো সরঞ্জাম থাকে না। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাসও তারা ঠিকমতো পায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় মাছ ধরার নৌকায় কখনো কখনো জলদস্যু আক্রমণ করে জেলেদের হত্যা করে মাছ নিয়ে যায়। এ ছাড়া অনেক জেলে মাছ ধরার সময় সাপ ও কুমিরের কামড়ে এমনকি বাঘের আক্রমণে মারা যায়। যখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য মারা যায়, তখন তার পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। মৎস্য অধিদফতরের আওতাধীন ‘জেলেদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদান’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত নিহত জেলে পরিবারকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। রাজস্ব বাজেট থেকে এ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার স্বার্থে নীতিমালা দরকার।

সর্বশেষ খবর