শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনাঝুড়ি

শেরপুর প্রতিনিধি

সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনাঝুড়ি

শেরপুুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলা ‘গারো পাহাড়’ প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্যের এক মনোরম লীলাভূমি। বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষা অরণ্য বেষ্টিত এ গারো পাহাড়।

শেরপুর সদর উপজেলা থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। এখানে কালের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে  আছে প্রাচীন ও  প্রত্নতাত্ত্বিক নানা নিদর্শন। গারো পাহাড়ের ছোট বড় অসংখ্য পাহাড় আর টিলা বিমোহিত করে আগন্তুকদের। লাল মাটি আর সবুজ বৃক্ষ গারো পাহাড়কে আরও নন্দিত করেছে। পাহাড় জুড়েই গারো, কোচ, হদি, হাজং, ডালু, বর্মণ নৃতাত্ত্বিক মানুষের বসবাস। এই পর্যটন এলাকায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ১০ কিলোমিটারব্যাপী আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। ওয়াকিফহালদের মতে, প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য মণ্ডিত, উপজাতি অধ্যুষিত এ অঞ্চলকে ঘিরে পর্যটন অঞ্চল গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সম্প্রতি সরকারের করা সীমান্ত সড়ক নির্মাণে। শ্রীবরদী উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবিত ‘নেওয়াবাড়ী সোনাঝুড়ি’ এলাকাটি সমতল ভূমি থেকে ৪০ ফুট উঁচুতে। এটি একটি টিলার উপরে অবস্থিত। এই টিলায় রয়েছে বিস্তীর্ণ সমভূমি। এটি ময়মনসিংহ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় মালভূমি। নেওয়াবাড়ীকে ঘিরে রেখেছে ছোটবড় অসংখ্য টিলা। এর পাশেই রয়েছে ছোট্ট নদী ঢেউফা। ঢেউফার শান্ত স্নিগ্ধ জলস্রোত বছরব্যাপী প্রবহমান থাকে। এ নদীর বুকে কাথাও কোথাও জেগে উঠেছে চকচকে সোনাবর্ণ বালি। অন্য পাশে রয়েছে ঐশ্বরিক এক স্বপ্নপুরি রাজা পাহাড়। রাজা পাহাড়কে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে ঢেলে সাজিয়ে রেখেছে। প্রচলিত আছে কয়েকশ বছর আগে এখানে এক রাজার বাসস্থান ছিল। রাজা থাকতেন বলেই এই পাহাড়ের নাম রাখা হয় ‘রাজা পাহাড়’। পাহাড়ের চূড়ায় শত হেক্টর সমতল বিরাণ ভূমি রয়েছে। রাজা পাহাড়ের সমতল ভূমিতে উঠলেই পুরো অঞ্চলের সবুজ দিগন্ত প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। সবুজ আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের নৈঃসর্গিক দৃশ্যকে আলিঙ্গন করা যায়। রাজা পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ভারতের মেঘালয়ের সৌন্দর্যসহ অনেক কিছুই উপভোগ করা যায়। শ্রীবরদীর সবচেয়ে দীর্ঘতম নদী সোমেশ্বরী মেঘালয় রাজ্যের পুরাখাসিয়া থেকে জন্ম নিয়ে এখানে সুমেশ্বরী নাম ধারণ করেছে। সুমেশ্বরী রাণী শিমুল ইউনিয়নের খাড়ামোড়া-রাঙ্গাজান গ্রামের ভিতর দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়ে পার্শ্ববর্তী ঝিনাইগাতি উপজেলা হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। এই সুমেশ্বরী নদী পুরো অঞ্চলকে করেছে আরও নান্দনিক। জানা গেছে, বহু আগে থেকে এ অঞ্চলটি সৌন্দর্য মণ্ডিত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা আর হাতির উপদ্রবের কারণে মানুষের যাতায়াত ছিল সংরক্ষিত। স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী এ কে ফজলুল হকের ঐকান্তিক চেষ্টায় পাহাড়ের দুর্গম বাঁকে বাঁকে পিচ ঢালা সুন্দর সড়ক, যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় এবং বিদ্যুতের জন্য সোলার সিস্টেম চালু করায় কমেছে হাতির উপদ্রব।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এই গারো পাহাড়ের সৌন্দর্যের মধ্যমণি সোনাঝুড়ির নেওয়াবাড়ীতে ৭৭.১৩ একর জমিতে নির্মিত হবে জেলা প্রশাসনের পর্যটন কেন্দ্র। শ্রীবরদী সদর থেকে নেওয়াবাড়ীর দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সোনাঝুড়িতে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র করতে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। শ্রীবরদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা নাছরিন এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা, সুযোগ-সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন। 

শেরপুরবাসী মনে করছেন, নেওয়াবাড়ীতে পর্যটন কেন্দ্র হলে একে ঘিরে বদলে যাবে পুরো জেলার অর্থনীতি। শেরপুর জেলার আদিবাসী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ হবে এবং সীমান্তবর্তী জনপদটি সারা দেশের কাছে পরিচিত হয়ে উঠবে। পিছিয়ে পড়া নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনের আমূল পরিবর্তন হবে। বিনোদন প্রেমীরা পাবেন নির্মল আনন্দ। আর মানুষের যাতায়াতে মুখরিত হওয়ার ফলে সীমান্তের দুঃখ হাতির উপদ্রবও কমবে। সব মিলে সমৃদ্ধ হবে জাতীয় অর্থনীতি।

সর্বশেষ খবর