রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখের কাছাকাছি

দিনে নিবন্ধন গড়ে ১২ হাজার জনবল ও অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধি

ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের আওতায় আনার পরিকল্পনা দ্রুতই বাস্তবায়ন হতে চলেছে। গতকাল পর্যন্ত উখিয়া ও বালুখালীর ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে ৫ লাখ ৭৫ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশন অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা জানান, আর এক মাসের মধ্যেই নিবন্ধন কাজ শেষ হবে। অধিদফতরের উপপরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকের হোসেন বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার পর্যন্ত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের নিবন্ধিত করা হচ্ছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর এই কার্যক্রমের উদ্বোধনী দিনে নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ১২ জন। শুরুতেই লোকবল ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাবে কার্যক্রম স্লথ গতিতে চললেও এখন সে ধরনের কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তায় পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশন অধিদফতর রোহিঙ্গাদের এই নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আগামী এক মাসের মধ্যে উখিয়ার ১২টি ক্যাম্প ও টেকনাফের আটটি ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গতকাল এক দিনেই নিবন্ধন হয়েছে ১৩ হাজারের অধিক জনের। জানা যায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা এখন ১৫ লাখেরও বেশি। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা ১৯৭৮ সাল থেকে কয়েক ধাপে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কিন্তু গত ২৪ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ‘রোহিঙ্গা নিধন’ অভিযান শুরু হলে ২৫ আগস্ট থেকে সে াতের মতো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে থাকে আরও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশনের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘নিবন্ধন একটি জটিল প্রক্রিয়া। শুরুতে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকলেও এখন কোনো সমস্যা নেই। এখন প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া ও কাজের গতি অব্যাহত থাকলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেশি সময় লাগবে না।’ সরেজমিন উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী-দুই এর কয়েকটি নিবন্ধন ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, একেকটি বুথের সামনে ৩০০ থেকে ৪০০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুর লাইন। বুথের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, ৪০ থেকে ৫০ জন সেনা ও বিজিবি সদস্য এবং পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশনের লোক নিবন্ধন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নাম-ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের পর প্রিন্ট করা কাগজে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে মুহূর্তেই তাদের হাতে দেওয়া হচ্ছে ল্যামিনেটেড নিবন্ধন কার্ড তথা পরিচয়পত্র। নিবন্ধন কার্ড পেয়ে রোহিঙ্গাদের মুখে হাসি ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। কুতুপালংয়ের প্রধান নিবন্ধন বুথ থেকে পরিচয়পত্র হাতে নিয়ে বের হওয়ার সময় কথা হয় আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন আমার আর ত্রাণ ও অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা পেতে অসুবিধা হবে না। ক্যাম্পের বাইরে গেলেও এই পরিচয়পত্র দেখিয়ে আবারও ভিতরে আসতে পারব। তাই এটা সবার করা উচিত।’ অপর এক রোহিঙ্গা আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা আরও আগে এই নিবন্ধন কার্ড হাতে পেতাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তখন নিবন্ধনের সময় কার্ডে ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয়টি না থাকায় নিবন্ধন করতে নিষেধ করেছিল। তাদের কথা শুনে আমরা ভুল করেছি। যে দেশ আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, সে দেশের নিয়ম মতো কাজ করা আমাদের উচিত।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবে প্রথমে একটি মাত্র বুথেই কাজ করতে হয়েছে। এ কারণে বেশি সংখ্যক নিবন্ধন সম্ভব হয়নি। এখন সাতটি বুথে কাজ চলছে। কয়েকদিনের মধ্যে মোট ২৫টি বুথে কাজ শুরু হবে। তখন প্রতিদিন অন্তত ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা যাবে। শুরুর দিকে নিবন্ধিত হতে রোহিঙ্গারা অনীহা দেখান। নিবন্ধিত হলে নতুন কোনো সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার মতো অজানা শঙ্কাও তাদের ভিতর কাজ করেছে। তাছাড়া সরকার নিবন্ধন করে বাংলাদেশ থেকে তাদের বিতাড়ন করবে কি না তা নিয়েও কারও কারও ভিতর ভয় কাজ করছে। এখানে একটি নিবন্ধন কার্ডে দেখা যায়, নাম, বয়স, পিতা, মাতা, জন্ম তারিখ, ধর্ম, জন্মস্থান, দেশ, জাতীয়তা, নিবন্ধনের তারিখ, ঠিকানাসহ ১২টি তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয়তা মিয়ানমার এবং জন্মস্থান-দেশও উল্লেখ করা হয়েছে মিয়ানমার। বাংলাদেশ পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদফতরের উপপরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকের হোসেন বলেন, শৃঙ্খলা ফেরায় আগের তুলনায় বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের গতি অনেক বেড়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রদত্ত নিবন্ধিত কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রীসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারায় তাদের নিবন্ধের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখনো পুরনো রোহিঙ্গাদের অনেকে নিবন্ধনের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর