সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পায়রাতে হবে গভীর সমুদ্রবন্দর

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পায়রাতে হবে গভীর সমুদ্রবন্দর

প্রথমে সোনাদিয়া ও পরে মাতারবাড়ীর নাম এলেও শেষ পর্যন্ত পটুয়াখালীর পায়রাতেই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সরকারের উদ্যোগ কার্যকর হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমানোর পাশাপাশি বড় আকারের জাহাজ ভেড়ার জন্য দেশে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে সেটি পায়রাতেই হচ্ছে। সোনাদিয়ায় বন্দর নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি হতে হতেও হয়নি। মাতারবাড়ীতে বন্দর নির্মাণে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে জাপান। পায়রা বন্দর নির্মাণেও আগ্রহী চীন ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ। তবে পায়রার অবকাঠামো কাজ এখন পর্যন্ত সরকারের নিজস্ব অর্থায়নেই হচ্ছে।

সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পায়রায় নির্মাণাধীন সমুদ্রবন্দরটিকে ‘গভীর সমুদ্রবন্দর’ হিসেবে নির্মাণ করা হবে।

পায়রা বন্দর অধিশাখা থেকে চিঠিটি পাঠানো হয় গত ১৩ নভেম্বর।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সক্ষমতা অর্জন এবং দেশের মধ্য-দক্ষিণাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ চ্যানেলে দেশের তৃতীয় এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে মহাজোট সরকার। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ গঠনের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হয়। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। পরে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির তৃতীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয় পায়রা বন্দরের নাম পরিবর্তন করে ‘পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর’ করতে হবে এবং সম্ভাব্যতা যাচাই করে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।  সূত্র জানায়, সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ১৩ নভেম্বর বিষয়টি চিঠি দিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরকে রেলপথে যুক্ত করতে যুক্তরাজ্যের ডিপি রেল ইউকে নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) হয়েছে গত ডিসেম্বরে। সে অনুযায়ী ২৪০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। ডিপি রেলের সঙ্গে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের চুক্তি হয়েছে। যার মাধ্যমে চাইনিজ কোম্পানি ডিপি রেলের অংশীদার হিসেবে কাজ করবে এবং রেলওয়ে নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করবে। এ রেলওয়ে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার মাধ্যমে বন্দর থেকে ঢাকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে। এ ছাড়া গভীর সমুদ্রবন্দরের উপযোগী করে মূল চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের কাজ করতে বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম চ্যানেল সুয়েজ খাল খননের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বেলজিয়ামভিত্তিক কোম্পানি জান ডি নুলর সঙ্গে গত বছর সমঝোতা চুক্তি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।  নৌ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ চ্যানেলের ভিতরে জাহাজ চলাচলের জন্য নিম্নতম ৬ থেকে ৭ মিটার গভীরতা রয়েছে। চ্যানেলটি প্রায় ৩০ কিলোমিটার লম্বা। যে কারণে রাবনাবাদ চ্যানেলে গভীর সমুদ্রবন্দর (পায়রা) নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দরের মূল চ্যানেলের ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ২০১৮ সালের মধ্যে ১২ মিটার আকারের জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব হবে। তা ছাড়া ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হলে এটি কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার প্লান্ট চালু করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। কারণ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আমদানিতে বন্দর ব্যবহার হবে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে চালু রয়েছে। তবে যোগাযোগ সমস্যার কারণে  মোংলা বন্দরের পুরো ব্যবহার না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই দেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতি বছরে দেশের বন্দরের ব্যবহার ১২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জরুরি হয়ে উঠেছে নতুন একটি বন্দর। উপরন্তু বর্তমান দুটি বন্দরে যে আকারের জাহাজ আসতে পারে, এর চেয়ে বৃহত্তর দৈর্ঘ্য ও বেশি গভীরতার জাহাজ সরাসরি পায়রা বন্দরের জেটিতে আসতে পারলে সামগ্রিকভাবে লাভবান হবে দেশের শিল্প ও বাণিজ্য। অর্থনীতিতে সৃষ্টি হবে ব্যাপক গতি সঞ্চার।

সর্বশেষ খবর