সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এমপিদের অধিকার ক্ষুণ্নের প্রতিকার নেই

কমিটির বৈঠক হয় না এক যুগ

আহমদ সেলিম রেজা

জাতীয় সংসদের এমপিদের অধিকার সুরক্ষার জন্য রয়েছে একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির নাম, ‘বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। কিন্তু গত এক যুগেও এই কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি। তবে এনিয়ে চলতি সংসদের এমপিরা নোটিস দিয়েও ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় সংসদেই নিজেদের হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখা জানায়, কোনো সদস্য বিশেষ অধিকার প্রশ্নের নোটিস নিতে চাইলে তাকে সচিবের কাছে লিখিতভাবে জানাতে হয়। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন স্পিকার। তিনি নোটিসের বিষয়টি জরুরি মনে করলে তা সংসদে উত্থাপনের অনুমতি দেন। সংসদ তা গ্রহণ করলেই তা ‘বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংসদে ব্যক্তিগত অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার নোটিস দিয়েছিলেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান ও একই দলের রাজশাহী ৪ আসনের এনামুল হক। কিন্তু নোটিস দুটি গৃহীত হওয়ার পরও ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় এ নিয়ে সংসদে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন শামীম ওসমান।

গত ১৬ নভেম্বর শামীম ওসমান সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, যে কোনো বিষয়ে আপনি নোটিস দেওয়ার জন্য বলেন। এখানে আমি একজন অসহায় সংসদ সদস্য। এই সংসদে আমার ব্যক্তি অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়া নিয়ে নোটিস দিয়েছিলাম। নোটিস দেওয়ার পর ৮টা অধিবেশন চলে গেল শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম এখন পর্যন্ত জবাব পেলাম না। আমি সংসদ সদস্য (এমপি) এখানে অসহায়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে? তিনি আরও বলেন, আমি একজন সংসদ সদস্য হয়ে এই সংসদের দশম অধিবেশনে আর ১৪তম অধিবেশনে নোটিস দিলাম তার রেজাল্ট না পাই, তাহলে আমার কী করণীয়? আপনার কাছে জানতে চাই। এমপি হিসেবে আমি মনে করি আমি এখানে অসহায়। তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে? এ সময় ডেপুটি স্পিকার বলেন, আপনার বিষয়টি আমি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। একইসঙ্গে তিনি বলেন, এই সংসদের মাধ্যমে সংসদ সচিবালয়কে বলব সংসদ সদস্যের নোটিসের জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, চলতি সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে গত ২৬ জানুয়ারি রাজশাহী ৪ আসনের এমপি এনামুল হক কার্যপ্রণালি বিধির ১৬৪ বিধিতে তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে মর্মে একটি নোটিস উত্থাপন করেন। সেখানে তিনি গত ২৩ জানুয়ারি ইংরেজি দৈনিক অবজারভারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কারণে অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। সেই খবরের শিরোনাম ছিল, পুলিশ ওয়েট এমপি অর্ডার টু ক্র্যাকডাউন অন ড্রাগস লর্ড। সেদিন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নোটিসটি বিবেচনায় নিয়ে ১৬৮ বিধিতে ভোটে দিলে সংসদে তা গৃহীত হয়। পরে স্পিকার নোটিসটি কমিটিতে পাঠিয়ে দেন। দুই সপ্তাহ পরে একই খবরের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের এমপি এ কে এম শামীম ওসমানও সংসদে একই বিধিতে তার অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার নোটিস উত্থাপন করেন। এই নোটিসটিও সংসদে গৃহীত হয় এবং কমিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে বর্তমানে বিশেষ অধিকার কমিটিতে দুটি নোটিস জমা রয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের কমিটি শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই কমিটির সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। সেটা ছিল অষ্টম জাতীয় সংসদের ঘটনা। বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত সেই কমিটির বৈঠকে এমপির অধিকার ক্ষুণ্নের নোটিসের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি সাব-কমিটি করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সাব কমিটির রিপোর্ট আর মূল কমিটিতে জমা হয়নি। পরবর্তীতে সেই কমিটিও আর বৈঠকে বসেনি। এরপর নবম সংসদের পুরো ৫ বছর মেয়াদেও ‘বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি। এখন চলছে দশম জাতীয় সংসদ। আগামী জানুয়ারি এই সংসদও চার বছর পূর্ণ করবে। কিন্তু এর মধ্যে বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক হয়নি। এ বিষয়ে বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে নিষ্পত্তিযোগ্য দুটি নোটিস আমরা পেয়েছি। আমরা চিন্তা করছি ডিসেম্বর মাসে এটা নিয়ে বসব। ‘বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হলেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি, আওয়ামী লীগের এইচ এন আশিকুর রহমান, এমপি (রংপুর-৫), মো. শাহাব উদ্দিন (মৌলভীবাজার-১), স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী (পিরোজপুর-৩), জাতীয় পার্টির মো. জিয়াউল হক মৃধা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি।

 

সর্বশেষ খবর