সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডিভোর্স ঠেকাতে রাবি ছাত্রীকে অপহরণ

তিন আসামি গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় গ্রেফতার সাবেক স্বামী সোহেল রানাসহ তিনজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। গতকাল আদালতে হাজির করে তাদের এই রিমান্ড চাওয়া হয়। অন্য দুই আসামি হলেন সোহেল রানার বাবা জয়নাল আবেদীন এবং অপহরণে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের চালক জাহিদুল ইসলাম। তাদের রিমান্ডের বিষয়ে আদালত গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা ফাঁড়ির পরিদর্শক ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপহৃত ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গতকাল বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী মহানগর পুলিশ। সেখানে নগর পুলিশ কমিশনার মাহাবুবুর রহমান বলেন, গোয়েন্দাতথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে ঢাকায় মাইক্রোবাসচালক জাহিদুলকে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ঢাকার রায়েরবাগ এলাকার একটি কাজী অফিসে যাওয়ার সময় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আটক করা হয় অপহরণকারী সোহেলকে। তিনি বলেন, এক বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। কিছুদিন আগে স্বামীকে ডিভোর্স দেন ওই ছাত্রী। ডিভোর্স অফিসিয়ালি কার্যকর হওয়ার আগে বিচ্ছেদ ঠেকাতে স্ত্রীকে শুক্রবার ক্যাম্পাস থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যান সোহেল রানা। জোরপূর্বক ডিভোর্স প্রত্যাহার করানোর জন্য তাকে ঢাকায় কাজী অফিসেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। মাহাবুবুর রহমান জানান, উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য নগর পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করেছে। পুলিশ সদর দফতরের সহায়তায় মতিহার থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘যে কোনো জায়গায় ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনার পর দ্রুত ছাত্রীকে উদ্ধার করা গেছে এটা স্বস্তির। তবে নিরাপত্তাব্যবস্থা অপ্রতুল ছিল আমি স্বীকার করি। আমরা কর্তৃপক্ষকে বলব নিরাপত্তার জন্য আরও বেশি ব্যবস্থা নিতে।’ সংবাদ সম্মেলন শেষে ওই ছাত্রীর বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেয়েকে ফিরে পাওয়ায় আমি পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। সোহেল রানা বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছিল। আর কোনো মেয়েকে যেন এ ধরনের নির্যাতনের শিকার না হতে হয়।’ মেয়ে স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন এমন গুজবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা আমার মেয়ের ক্ষতি করার জন্য আগে থেকেই হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। এর সূত্র ধরেই তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।’ মেয়ের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘মাইক্রোবাসে তোলার সময় চিৎকার করে আমার মেয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু মাইক্রোবাস বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পার হয়ে যাওয়ার পর হুমকির মুখে ওই ছেলের কথামতো চুপচাপ ছিল সে। না হলে তারা আমার মেয়ের আরও ক্ষতি করত।’উল্লেখ্য, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রী বিভাগের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য তাপসী রাবেয়া হল থেকে বের হয়ে বিভাগে যাচ্ছিলেন। ফজিলাতুন নেসা হলের সামনে থেকে তাকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান সোহেল ও তার সহযোগীরা। ওই দিন সন্ধ্যায় মতিহার থানায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে অপহরণ মামলা করেন। মামলায় স্বামী সোহেল রানাসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। পরে রাতে ওই ছাত্রীর শ্বশুর জয়নাল আবেদীনকে নওগাঁর পত্নীতলা থেকে আটক করা হয়।

সর্বশেষ খবর