মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাহাড় দখল উৎসব সীতাকুণ্ডে

দখলদারদের তালিকায় জনপ্রতিনিধি-প্রতিষ্ঠান, প্লট করে হচ্ছে বিক্রি, দেখার কেউ নেই

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

পাহাড় দখল উৎসব সীতাকুণ্ডে

ওপর থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায় পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে ঘরবাড়ি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে চলছে পাহাড় দখল উৎসব। এ প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে কর্পোরেট শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে নাম সর্বস্ব সংগঠনগুলোও। দখলদারদের তালিকায় আছেন বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। বাদ যায়নি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও।

গত কয়েক বছরে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার একর পাহাড় দখলের পর তা কেটে পরিণত করা হয়েছে সমতল ভূমিতে। সেখানে তৈরি হচ্ছে শিল্প-কারখানা। এমনকি প্লট তৈরি করে বিক্রির ঘটনাও ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে নাকের ডগার ওপর পাহাড় ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রশাসন রয়েছে  দর্শকের ভূমিকায়। চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক মকবুল হোসেন বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর পরিবেশ অধিদফতর বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে। কিছু ব্যক্তি, সংগঠনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা যায়, আলোচিত জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় পাহাড় কাটার এই মহা উৎসব দীর্ঘদিন ধরেই ওপেন সিক্রেট। এ এলাকায় এরই মধ্যে শত শত একক পাহাড় কেটেছে কথিত ‘ছিন্নমূল’ নামে একটি সংগঠন। পাহাড় কেটে ছিন্নমূলদের জন্য তৈরি করেছে হাজার হাজার বসত বাড়ি। শুধু তাই নয়, পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করে নদী ভাঙা মানুষদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। একই ভাবে শীতলপুর এলাকার পাহাড় বিলীন করছে আবুল খায়ের গ্রুপের কয়েকটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। গত কয়েক বছরে উপজেলার শীতলপুর এলাকার অর্ধশতাধিক ছোট ও বড় পাহাড় কেটে তা সমতল ভূমিতে পরিণত করেছে তারা। তাদের আগ্রাসন থেকে বাদ যায়নি সরকারি খাস ভূমি থেকে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়। মুক্তিযোদ্ধা ও বাস্তুহারাদের পুনর্বাসনের জন্য আবেদন করা পাহাড়ও তাদের আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। তারা কয়েক বর্গ কিলোমিটার পাহাড় কেটে বিরান ভূমিতে পরিণত করেছে। উপজেলার বড় কুমিরা এলাকায় পাহাড় কেটে ইস্পাত কারখানা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ দিদারুল আলমের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া অনেকটা ওপেনসিক্রেটভাবে পাহাড় কাটার উৎসব চলছে উপজেলার কুমিরা, ফৌজদারহাট, বাঁশবাড়িয়া, সুলতানা মন্দির, কদম রসুল, বাড়বকু, ভাটিয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকায়। এ ছাড়া ইট ভাটার নামেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে পাহাড় কাটার উৎসব। জঙ্গল সলিমপুর এলাকার একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারদলীয় নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট কয়েকজন সলিমপুরে পাহাড় কাটার নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা পাহাড় ও টিলাগুলো কেটে সমতলে পরিণত করছে। পরে তা প্লট করে লাখ লাখ টাকা দিয়ে নদী ভাঙা মানুষদের কাছে বিক্রি করছে। তাদের বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্নজনকে অভিযোগ করা হলেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর