মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আরও ৪২ জেলায় সম্প্রসারিত হচ্ছে দুদকের কার্যক্রম

আজ প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর

মোস্তফা কাজল

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের প্রতিষ্ঠার আজ ১৩ বছর। গত বছর ২২ জেলায় দুদকের নতুন অফিস স্থাপন করা হয়। আসছে বছরে অবশিষ্ট ৪২ জেলায় নতুন অফিস স্থাপন করবে দুদক। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, এ ব্যাপারে সরকারে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও অনুমোদন পাওয়া গেছে। এসব জেলার ৫০০ ইউনিয়নের তৃণমূলে গঠন করা হবে দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিটি। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চারজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে চারটি বিশেষ দুর্নীতি  দমন টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া দুদকের ১০৬ কল সেন্টারের কারণে তাত্ক্ষণিক দুর্নীতির তদন্ত করতে পারছে দুদক। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এ সংস্থাটি। এ উপলক্ষে আজ সকালে দুদকের সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। পরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শপথ গ্রহণ ও আলোচনা সভা। দুদক চেয়ারম্যানসহ দুই কমিশনার আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখবেন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, উন্নয়নের প্রধান বাধা দুর্নীতি। দুদক তার যাবতীয় শক্তি দিয়ে দুর্নীতি দমনে কাজ করছে। আমাদের যে শক্তি-সামর্থ্য রয়েছে তা দিয়েই গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছিল দুদকের ভাবমূর্তি। কিন্তু চলমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা ও সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের আলোচনার জন্ম দেয়।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে নজরদারি : দুদক গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে পাঁচটি প্রাতিষ্ঠানিক দল গঠন করেছে। সংস্থার পাঁচ পরিচালক দলগুলোর নেতৃত্ব দেবেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর। পর্যায়ক্রমে ডেসা, ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, সিটি করপোরেশন, খাদ্য অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, রেলওয়ে, পাসপোর্ট অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, সরকারি আবাসন পরিদফতর, সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের জন্য দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক দল গঠন করা হবে। দুদক সূত্র জানায়, প্রাতিষ্ঠানিক দলগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন, বিধিবিধান, পরিচালনা পদ্ধতি পর্যালোচনার পাশাপাশি ওই সব প্রতিষ্ঠানে সরকারি অর্থ অপচয়ের দিকগুলো পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক, নাগরিক সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, প্রতিবন্ধকতা, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি, দুর্নীতির কারণ ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে তারা যে তথ্য চাইবে, তা দিয়ে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সার্বিক বিশ্লেষণসহ প্রতিবেদন ও সুপারিশ কমিশনে জমা দেবে দলগুলো।

দুদকের কার্যালয়েও শুদ্ধি অভিযান : দুদকে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কাজ ফাঁকি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে, তাদের পরিবর্তে বিভিন্ন ক্যাডারের সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের প্রেষণে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে সংস্থাটির উপপরিচালক পদমর্যাদার ছয় কর্মকর্তাকে সরকারি বিভিন্ন অধিদফতর ও পরিদফতরে প্রেষণে বদলি করা হয়েছে। আর্থিক অনিয়মে কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। হাজতখানা, সশস্ত্র ইউনিট ও ট্র্যাকিং মেশিন : দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করতে এবং আধুনিক সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ হয়েছে শক্তিশালী সশস্ত্র ইউনিট, নিজস্ব হাজতখানা ও অপরাধী শনাক্তকরণের জন্য মোবাইল ট্র্যাকিং মেশিন। এরই মধ্যে ২০ সদস্যের সশস্ত্র ইউনিট গঠন করা হয়েছে।

 এ ছাড়া দুদকের নিজস্ব হাজতখানা তৈরি করা হয়েছে। দুদকের নামে চাঁদাবাজদের মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে তাদের অবস্থান জানতে ট্র্যাকিং মেশিন কেনার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দুদকের ভিতরেই গঠন করা হবে একটি দক্ষ ট্র্যাকিং ইউনিট। আসামি গ্রেফতারসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কাজে ওয়াকিটকি ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃপক্ষের কাছে ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ চেয়ে কয়েক দিন আগে কমিশন চিঠি পাঠিয়েছে। আসামির বক্তব্য রেকর্ড করতে ও ছবি সংগ্রহে রাখতে কেনা হবে ডিজিটাল স্টিল ক্যামেরা, ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরা ও ভয়েস রেকর্ডার।

সর্বশেষ খবর