বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

তাঁবুর ভিতর কাবু রোহিঙ্গারা

ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে ফিরে

অনেকটা এক কাপড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রায় প্রত্যেকেই ত্রাণ হিসেবে সাধারণ জামা-কাপড় পেলেও অধিকাংশের মেলেনি শীতবস্ত্র। ফলে উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ে পাহাড়ে অজস্র তাঁবুর ভিতর শীতে কাবু হয়ে আছে রোহিঙ্গারা। দুই দিন ধরে কক্সবাজার অঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, এখানে এখন তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। সামনে পারদ আরও নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের বেলায় সূর্যের তেমন একটা দেখা মেলে না। সন্ধ্যার আগেই কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। তাই সন্ধ্যা নামার আগেই শীতবস্ত্রহীন রোহিঙ্গারা নিজেদের তাঁবুর ভিতরে জবুথবু হয়ে বসে থাকে। ক্যাম্পে আশ্রিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে শীত আতঙ্কে। সরকারি ভাণ্ডারে ৪০ হাজার শীতবস্ত্র জমা পড়েছে জানিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আরও ১ লাখ শীতবস্ত্র তথা কম্বলের চাহিদার কথা জানানো হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সবাইকে শীতবস্ত্র দিতে পারব বলে আশা করছি।’ জানা গেছে, সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থা ও এনজিওর কাছেও রোহিঙ্গাদের জন্য শীতবস্ত্র চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন সংস্থা শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে। এতে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার শীতবস্ত্র পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি তাঁবুতে গড়ে একটি করে কম্বল দিতে গেলেও প্রয়োজন হবে অন্তত ২ লাখ কম্বল।

ক্যাম্পে দায়িত্বরত বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা জানান, একটি পরিবারে চারজনের বেশি সদস্য থাকলে তাদের একাধিক কম্বল লাগবে। কিন্তু উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সদস্য সংখ্যা গড়ে ৫ থেকে ১০ জন। এত বিপুল পরিমাণ কম্বল বা অন্যান্য শীতবস্ত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়া সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকার ও এনজিওর পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। ইউনিসেফের হিসাবমতে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার শিশু রয়েছে। শীতের প্রকোপে শিশুদের নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। এমনিতেই রোহিঙ্গা শিশুদের অধিকাংশই ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, রক্তশূন্যতা, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে। তার ওপর শীতে আক্রান্ত হলে তাদের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেবে বলে মনে করছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া উখিয়া-টেকনাফের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি জনপদে আশ্রয় নেওয়ার কারণে স্বভাবতই এখানে শীতের মাত্রা বেশি। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেহেতু ত্রাণের ওপরই নির্ভরশীল এখানকার আশ্রিত রোহিঙ্গারা, তাই তাদের জন্য ত্রাণ হিসেবে শীতবস্ত্রও আমরা আশা করছি সরকারি-বেসরকারি ও দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে। লাখ লাখ শীতবস্ত্রের জোগান দেওয়া কোনো প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন সংস্থাকে শীতবস্ত্রের চাহিদার কথা জানিয়েছি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও ১ লাখ শীতবস্ত্রের চাহিদাপত্র দিয়েছি। এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দেওয়া প্রায় ৪০ হাজার শীতবস্ত্র আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। আমরা দ্রুত সেগুলো বিতরণ করব।’

সর্বশেষ খবর