বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সীমানার রোডম্যাপে নেই ইসি

ডিসেম্বরে সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের কথা থাকলেও এখনো কিছুই হয়নি

গোলাম রাব্বানী

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত রোডম্যাপ থেকে ছিটকে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশের কথা থাকলেও এখনো অনেক কাজ বাকি। কমিশন বলছে, কিছু কাজ এগিয়েছে; কিন্তু দুটি আসন নিয়ে আদালতের নির্দেশনা থাকায় ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক খসড়া প্রকাশের কাজটিও পিছিয়ে গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ১৬ জুলাই এ রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী— অক্টোবরে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া তালিকা প্রণয়ন; নভেম্বরে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে দাবি-আপত্তি-সুপারিশ আহ্বান ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে আপত্তির বিষয়ে অঞ্চলভিত্তিক শুনানি নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা ইসি প্রকাশিত রোডম্যাপেই বলা হয়েছে। এরপর সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যস্ত সীমানার চূড়ান্ত গেজেট চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করার কথা ছিল। সেই সঙ্গে আইন সংস্কারের খসড়াও ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশের কথা থাকলেও তা ডিসেম্বরেও হচ্ছে না। ডিসেম্বরের বাকি আছে আর কয়েক দিন। অথচ এ ডিসেম্বরেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের পুনর্বিন্যাস করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের কথা ছিল। আর চলতি মাসে আইন সংস্কারের খসড়া প্রকাশ করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে আইন প্রণয়নের কথা ছিল। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি। আইন নিয়ে ইসি বার বার সভা করলেও এখনো খসড়া প্রস্তুত হয়নি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, এপ্রিল মাসের মধ্যেই আসনের গেজেট চূড়ান্ত করতে হবে। তবে তাড়াহুড়ো করেই রোডম্যাপে চলতি ডিসেম্বরেই শেষ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রোপম্যাপ অনুযায়ী কাজ চলছে। যথাসময়ে সব হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত রোডম্যাপে নতুন দল নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, ভোটার হালনাগাদ, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপ যথাসময়ে শেষ হলেও আইন সংস্কার ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ কাজে পিছিয়ে রয়েছে ইসি। এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের কিছু কাজ এগিয়েছে; কিন্তু দুটি আসন নিয়ে আদালতের নির্দেশনা থাকায় ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক খসড়া প্রকাশের কাজটিও পিছিয়ে গেছে। কর্মপরিকল্পনা ধরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করতে না পারলেও সামনে পর্যাপ্ত সময় হাতে রয়েছে বলে জানান তিনি। সীমানা নিয়ে নতুন আইন করার কথা রয়েছে; বিদ্যমান অধ্যাদেশ তো রয়েছেই। সব বিষয় মাথায় রেখে কাজ এগোচ্ছে। কর্মপরিকল্পনায় এ কাজটি পিছিয়ে থাকলেও আইনি জটিলতা নিষ্পত্তি হলে যত দ্রুত সম্ভব বাকি কাজ শেষ করা হবে। এদিকে ইসির সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত কাজের কর্মপরিকল্পনার সমালোচনা করেছে বিএনপি। গত ১২ অক্টোবর সংলাপে অংশ নিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইসির প্রকাশিত রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে— নির্বাচনী আসন পুনর্নির্ধারণের জন্য আইন চূড়ান্ত করা হবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। অথচ একই রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে— ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচনী আসন পুনর্বিন্যাস সম্পন্ন করে গেজেট প্রকাশ করা হবে। যা পরস্পরবিরোধী, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল চাইছে— বিদ্যমান সীমানাতেই সংসদ নির্বাচন হোক, নতুন আইন করলে জটিলতা হবে। বিএনপি বলছে, ২০০১ সালের আগের সীমানায় ফিরে যেতে হবে। ইসির যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, রোডম্যাপ ধরে সংলাপ হয়েছে, এটা শেষ করে প্রতিবেদন করার প্রস্তুতি চলছে, নতুন দলের নিবন্ধনের আবেদন প্রক্রিয়া চলছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজ শেষ করে খসড়া প্রকাশের প্রস্তুতিও চলছে।

সর্বশেষ খবর