বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আলুতে ধরা ১১ হাজার কোটি টাকা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আলুতে ধরা ১১ হাজার কোটি টাকা

সব বাণিজ্যিক ব্যাংক এমডির কাছে পৃথকভাবে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, আলুর দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় তাদের হিসাবে এ বছর কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের মোট ক্ষতির পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ১০ ডিসেম্বর এ চিঠিটি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতি কেজি আলুর পেছনে কৃষকের উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৪ টাকা। এখন হিমাগার পর্যায়ে কেজিপ্রতি সেই আলুর দাম পড়ছে ৩-৪ টাকা। কোথাও কোথাও বস্তাপ্রতি (৮০ কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায়। অথচ বছরের শুরুতে হিমাগার মালিকরা এই আলু কিনেছেন প্রতি বস্তা হাজার টাকায়। কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশারফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আলুর দাম কমে যাওয়ায় এবার কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার পর্যায়ে যে ক্ষতি হয়েছে তার রেশ টানতে হবে আগামী কয়েক বছর। এমনও হতে পারে, হিমাগার মালিকরা সামনের বছর আর আলু রাখতে উৎসাহিত হবেন না। কারণ এরই মধ্যে তাদের যে ব্যাংক ঋণ তা সুদে আসলে বেড়ে গেছে।’ এ টাকা পরিশোধ না করে নতুন করে কীভাবে তারা আলু হিমাগারে রাখবেন— প্রশ্ন রাখেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। চলতি বছর আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি মেট্রিক টন। দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন। ২০ লাখ মেট্রিক টন আলু উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন আলু এসে গেছে বাজারে। ফলে পুরনো আলু হিমাগার থেকে বের করার চাপ বেড়েছে। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে বাজারে শাক-সবজির উচ্চমূল্য বিরাজ করলেও চাহিদা না থাকায় ও মূল্য অস্বাভাবিক কম থাকায় আলু বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে না। অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, তাদের কাছে সংরক্ষিত ৫৩ লাখ মেট্রিক টন আলুর মধ্যে এ পর্যন্ত ২৭ লাখ মেট্রিক টন কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। বাকি আলুর মধ্যে বীজ আলু ও কিছু খাবার আলু বাদ দিয়ে ১৯ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন আলু অবিক্রীত থেকে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন হিমাগার মালিকরা। কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জে এমনও ঘটনা ঘটছে যে, ১ লিটার দুধের বিনিময়ে এক বস্তা আলু নেওয়া হচ্ছে গরুকে খাওয়ানোর জন্য। আলু ব্যবসায়ীদের জন্য এ পরিস্থিতি বিভীষিকাময়।’ তিনি বলেন, ‘আলু সংরক্ষণ করতে গিয়ে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ কয়েক শ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন হিমাগার মালিকরা। তাদের এ ঋণ পরিশোধের কোনো উপায় নেই এ বছর।’ জানা গেছে, আলুর দাম না পেয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত হিমাগার মালিকরা ব্যাংক ঋণ পরিশোধের বিষয়ে। এ ছাড়া হিমাগারের পরিচালন ব্যয়, বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিক ব্যয়সহ অন্যান্য খরচও বেড়ে গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে সময় চাওয়ার পাশাপাশি নতুন করে হিমাগারে আলু তুলতে আবারও ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল চাইছেন ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তারা। জানা গেছে, ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার নেতৃত্বে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে পুরনো ঋণ পরিশোধে রি-শিডিউল সুবিধা চেয়েছেন তারা। এ ছাড়া উচ্চ পর্যায়ের একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করে যে হিমাগারগুলোর ঋণ দরকার, সেই হিমাগারগুলোকে নতুন করে মূলধনী পুঁজি দেওয়ার সুপারিশ করেন। হিমাগার মালিকরা বলছেন, এ বছল আলু ব্যবসায় যে দুর্যোগ নেমেছে, তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ না দিলে নতুন মৌসুমে হিমাগার বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আবার সারা বছর আলু বাজারজাতকরণে নতুন সংকট তৈরি হবে। হয়তো চাইলেও বাজারে মিলবে না দরকারি এই সবজিটি।

সর্বশেষ খবর