বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কঠোর নিরাপত্তাবলয়ে থাকবে থার্টিফার্স্ট নাইট

উন্মুক্ত স্থানে গান-বাজনা নয় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

আলী আজম

থার্টিফার্স্ট নাইট বা ইংরেজি নববর্ষ উদ্‌যাপনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছেন পুলিশ-র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ইতিমধ্যে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশপথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক থাকবে পুলিশ-র‍্যাবসহ সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও উচ্ছৃঙ্খলতা রোধে থার্টিফার্স্ট নাইটে রাজধানীর সব বার বন্ধ থাকবে। থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)।

এদিকে, গতকাল রাজধানীর পুলিশ কনভেনশন সেন্টারে ঢাকা মেট্রোপলিটন শুটিং ক্লাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ, গান-বাজনা অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জানমালের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, থার্টিফার্স্ট নাইটে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। তার পরও নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে থার্টিফার্স্টে উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে    না। অনুমতিসাপেক্ষে ক্লাব, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠান করা যাবে। এদিন সন্ধ্যা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, মদের বার, উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান, জনসমাবেশ ও লাইন্সেসকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলশান, বনানী ও বারিধারায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ নজরদারি।

থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে টহল পুলিশ, চেকপোস্ট, সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে রাখারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার আশপাশে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। থাকছে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ। আর যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে বাসায় থার্টিফার্স্ট নাইট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং পুলিশকে জানান তাহলে তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কোথাও আতশবাজি বা পটকা ফোটানো যাবে না। থার্টিফার্স্টে সন্ধ্যার পরপরই নগরবাসীকে ঘরে ফিরতে হবে। থানা পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ডিবি, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। র‍্যাবের পক্ষ থেকেও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিশেষ নিরাপত্তাসহ টহল ও চেকপোস্ট থাকবে। রাজধানীসহ সারা দেশে র‍্যাবের ১৪টি ব্যাটালিয়নকে এ ধরনের নির্দেশনা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।

থার্টিফার্স্ট নাইটে নগরবাসীর নিরাপত্তায় মাঠে থাকবেন পুলিশ-র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১২ হাজারের বেশি সদস্য। থাকবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্পটে চেকপোস্ট ও ব্লক রেড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যার পর বহিরাগত কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা শুধু আইডি কার্ড দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন। ক্যাম্পাসে বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার লাগানো গাড়ি নিয়ে নীলক্ষেত ও শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন। আর কূটনৈতিকপাড়ার বাসিন্দাদের রাত ৮টার মধ্যে স্ব স্ব এলাকায় চলে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কূটনৈতিক জোনে প্রবেশের জন্য কাকলী ও আমতলী ক্রসিং খোলা রাখা হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের পরও পরিচয় দিয়ে এ দুটি ক্রসিং দিয়ে গুলশান, বনানী ও বারিধারার বাসিন্দারা প্রবেশ করতে পারবেন। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, থার্টিফার্স্ট নাইট ঘিরে রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে থাকছে টহল, সিসিটিভি ও চেকপোস্ট। বিশেষ নজরদারিতে থাকবে অভিজাত হোটেল ও ক্লাব। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, থার্টিফার্স্ট নাইটে যাতে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে সেজন্য র‍্যাব সতর্ক রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে থাকবে র‍্যাবের চেকপোস্ট। থাকছে র‍্যাবের ডগ স্কোয়াডও। সক্রিয় থাকবে র‍্যাবের পেট্রল টিম ও মোবাইল টিম। ইতিমধ্যে কূটনৈতিক এলাকাসহ রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে। ডিএনসি সূত্র বলছে, থার্টিফার্স্ট নাইট উদ্‌যাপন উপলক্ষে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধে ঢাকা মহানগরীর সব বার বন্ধ ও মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা নগরীর সব বার বন্ধ থাকবে।

সর্বশেষ খবর