শিরোনাম
শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

গৃহকর চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি চট্টগ্রাম মেয়রের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

গৃহকর চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি চট্টগ্রাম মেয়রের

বকেয়া থাকা গৃহকর পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আ. জ. ম. নাছির উদ্দীন। সেই চিঠি দেখে বিস্মিত অর্থমন্ত্রী নোট লিখে জানতে চেয়েছেন, ‘চট্টগ্রামে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কারা বকেয়া করেছেন।’ এই বকেয়া উসুলের জন্য আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও বলেছেন মুহিত। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে গত নভেম্বরে নতুন হারে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ (পঞ্চবার্ষিকী কর মূল্যায়ন কার্যক্রম) স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর রাজস্ব আয় ব্যাপক হারে কমে গেছে চসিক’র। এখন পুরোনো হারেও অনেকে গৃহকর পরিশোধ করছেন না। এ অবস্থায় বকেয়া আদায়ে মন্ত্রণালয়কেই টার্গেট করেছে চসিক। গত ১৪ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে চসিক মেয়র উল্লেখ করেন, ‘আপনার অধীনস্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের নিকট চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হাল ২৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬ টাকা পাওনা রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাবৃন্দ আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের নিকট বিল প্রেরণ পূর্বক প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় বকেয়া ও হাল গৃহকর রেইট পরিশোধ করতে পারছে না মর্মে উক্ত সংস্থা/প্রতিষ্ঠান হতে জানা যায়।’

নগরবাসীর সার্বিক সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের সিংহভাগ ব্যয় গৃহকর থেকে পাওয়া আয় থেকে নির্বাহ হয় বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।  জানা গেছে, বছর বছর চসিক’র ব্যয় বাড়লেও সে অনুপাতে আয় বাড়েনি। এ অবস্থায় চলতি অর্থবছর থেকে পঞ্চবার্ষিকী কর মূল্যায়নের আওতায় নতুনহারে গৃহকর আরোপ করে চসিক। এই রীতিতে আগে বর্গফুটের (আয়তন) ভিত্তিতে কর আদায় হলেও নতুন নিয়মে ভাড়ার ভিত্তিতে কর আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ নিয়ে গত অক্টোবরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।  চসিকের পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে সর্বোচ্চ ১০ গুণ পর্যন্ত গৃহকর বৃদ্ধির অভিযোগ তুলে নগরবাসী। নতুন করারোপের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন সাবেক মেয়ররা। বিবৃতি দেন সাবেক ২৩ কাউন্সিলর। তা ছাড়া বাড়িভাড়া নয়, আয়তন ও অবস্থানের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের দাবিতে কয়েকটি নাগরিক সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদেও ব্যাপক সমালোচনা হয়। বলা হয়, ভোটের আগে গৃহকর বাড়ানোর এই উদ্যোগ সরকারের জন্য বিপদজনক হবে। শেষে গত নভেম্বরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নতুন হারে ভাড়ার ভিত্তিতে আরোপিত গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ স্থগিত করে। জানা গেছে, নতুন রেটে গৃহকর আদায়ের কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার পর চসিকের কর আদায়ে ভাটা পড়ে। এছাড়া কর আদায়ে মন্ত্রণালয়ের এ ধরণের স্থগিতাদেশ ভালো চোখে দেখছেন না সিটি কর্পোরেশনের অনেকেই। সে কারণেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে বকেয়া পাওনা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, শুধু অর্থ মন্ত্রণালয় নয়, সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে চসিক’র গৃহকর পাওনা আছে সে’সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছেই বকেয়া পরিশোধে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে চসিক’র অন্তত দেড়শো কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

চসিক মেয়র আ. জ. ম. নাছির উদ্দীন দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের কাছে কর পরিশোধে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নাছির বলেন, পৌরকর প্রদানের জন্য অধীনস্থ সংস্থাসমূহকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়গুলিতে চিঠি দেয়া হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। চসিক মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের প্রধানদের উচিত নগরবাসীর স্বার্থে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ এনে চসিকের পৌরকর পরিশোধ করা। সরকারি সংস্থাগুলি কর পরিশোধ করলে সাধারণ মানুষও তাতে উৎসাহ পাবে। পৌরকর পরিশোধ করে যদি সেবা না পায় তাহলে সমালোচনা কিংবা অভিযোগ করার সুযোগ পাবে। কর না দিয়ে শুধু সমালোচনা করলে নগরবাসীর কোনো লাভ হবে না। শেষ পর্যন্ত এই শহরেরই ক্ষতি হবে।

সর্বশেষ খবর