বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
গোয়েন্দা কাহিনী - ১৪৫

ঘরেই ছিল খুনিরা

মির্জা মেহেদী তমাল

ঘরেই ছিল খুনিরা

রাজধানীতে খুন হয়েছেন সাবেক সরকারি এক কর্মকর্তা। ডাকাত দল বাসায় ঢুকে মালামাল লুটে নিয়ে যাওয়ার সময় কর কর্মকর্তা আবু তাহেরকে হত্যা করে যায়। সকালে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসনে শুরু হয় তোলপাড়। পুলিশ ও গোয়েন্দারা খুনি চক্রকে গ্রেফতারে মাঠে নামে। কিন্তু কোনোভাবেই পুলিশ খুনিদের নাগাল পায় না। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে ঘরের ভিতরেই দীর্ঘদিন ধরে ঘাপটি মেরে ছিল খুনি চক্র। সুযোগমতো বাড়ির মালামাল তারা লুটে নিয়ে যায়। রামপুরা ৩৪৭ টিভি রোডে কর কমিশনার আবু তাহেরের বাসার গ্রিল কেটে ভিতরে ঢুকে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। যাওয়ার সময় তারা গৃহকর্তা তাহেরের হাতের রগ কেটে দেয়। এতে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু ঘটে। ২০১৫ সালের ২ মার্চ ভোরে ওই বাসা থেকে চিৎকার-চেচামেচি শুরু হলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। হাত-পা বাঁধা তাহেরের স্ত্রীকে উদ্ধার করা হয়। বেডরুমে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তাহের। আর বাসার দুই গৃহকর্মী ছিল রান্নাঘরে। পুলিশ আসে। তদন্ত শুরু হয়। পুলিশ দুই গৃহকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে তাহেরের স্ত্রী পুলিশকে বাধা দেন। তাহেরের স্ত্রী পুলিশকে জানান, ওরা তাদের মেয়ের মতো। তারা এ ঘটনায় জড়িত নয়। পুলিশ তাদের আর জেরা করতে পারে না। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে তাহেরের পুরনো গাড়িচালক নাসির তাদের হুমকি দিয়েছিল। আর এ জন্য থানায় একটি জিডিও করেছিলেন তাহের। পুলিশ এই সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যায়। পুলিশ এবার শত বাধা সত্ত্বেও কাজের দুই মেয়ে সেলিনা ও নূরজাহানকে জেরা করে। তাদের মোবাইল ফোন জব্দ করে। পুলিশ মোবাইল ফোনের কললিস্ট দেখে নিশ্চিত হয় এরাও জড়িত। নাসিরের নাম্বার তাদের কললিস্টে রয়েছে। একপর্যায়ে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করে। নাসিরের সঙ্গে নূরজাহানের সম্পর্ক ছিল। নাসির ডাকাতির পরিকল্পনা করে। ঘটনার রাতে সেলিনা ও নূরজাহান দরজা খুলে দেয়। নাসিরের নেতৃত্বে আটজন পেশাদার ডাকাত ওই বাসায় ঢুকে বাসার সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। এরপর মালামাল লুটে নেয়। যাওয়ার আগে তাহেরকে হত্যা করে যায়। পুলিশ তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নাসিরসহ প্রত্যেককে গ্রেফতার করে। আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।

বিচার : সাবেক কর কমিশনার আবু তাহেরকে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রহমান সরদার ২০১৭ সালে আসামিদের উপস্থিতিতে এই আলোচিত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। আরও চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হলো— বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার আশুরাই গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে নাসির খান, উজিরপুরের বৈরকাঠি গ্রামের জাকির তালুকদারের ছেলে রাসেল তালুকদার, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর সাহাপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে রুস্তম, পিরোজপুরের ঝালকাঠি গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে আমির হোসেন ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ওজনচর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে সোহেল রানা। তাদের মধ্যে রুস্তম পলাতক। এ ছাড়া অপর দুই আসামি মাসুদ ও নূর আলমকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।

ডাকাতিতে সহযোগিতার দায়ে আবু তাহেরের গৃহপরিচারিকা সেলিনা ও নূরজাহানকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেন বিচারক।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর