বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঘুম থেকে উঠেই তারা এমপি!

বগুড়ার উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, বগুড়া থেকে

বগুড়ায় ঘুম থেকে উঠে অনেকেই এমপি হয়ে গেছেন। তাই বগুড়ায় কোনো উন্নয়ন নেই। বগুড়ার সাতটি আসনের অনেকেই ঘুম থেকে উঠে দেখেন, তারা অটো এমপি হয়ে গেছেন। তাদের এমপি হতে কোনো ভোটের প্রয়োজন হয়নি। ভোটারদের কাছে ভোটও চাইতে হয়নি। আর এ কারণে বগুড়ায় এমপিরা কোনো উন্নয়ন করারও প্রয়োজন মনে করেন না। তাই আজ বগুড়া উন্নয়নবঞ্চিত। এমন মন্তব্য করলেন খোদ বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ মমতাজ উদ্দিন। শুক্রবার রাতে বগুড়া জেলা শহরের দত্তবাড়ী এলাকার তন্ময় কমিউনিটি সেন্টারে ‘বগুড়ার উন্নয়ন’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সুধী ও সাংবাদিকদের সামনে প্রকাশ্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় মমতাজ উদ্দিন আওয়ামী লীগের দুজন এমপি সম্পর্কে বেশি কিছু না বললেও বগুড়া সদর আসনের জাতীয় পার্টির এমপি মো. নুরুল ইসলাম ওমর ও জাসদের এমপি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘তারা জানতেন না এমপি হবেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখেন এমপি হয়ে গেছেন। তাই জনগণের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা কম। ভোটের মাধ্যমে এমপি হলে বগুড়া নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা থাকত। উন্নয়নের কথা তারা সংসদে বলতেন। দেশের সব বড় পৌরসভা সিটি করপোরেশনে রূপ নিলেও বগুড়া পৌরসভা সিটি হচ্ছে না। এ ছাড়া বগুড়ার সঙ্গে সারা দেশের ও উত্তরাঞ্চলের অন্য জেলাগুলোর সহজে যোগাযোগ করার পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর মধ্যে বিমানবন্দর,  বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ রেল যোগাযোগের কাজ আজও শুরু হয়নি।’ তিনি এসব ব্যাপারে রোড শোর মতো আন্দোলনের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আজ কাজ করার লোকের বড়ই অভাব। কাজ করতে হলে পেছন দিক দিয়ে ধাক্কা দিতে হয়। ধাক্কা দেওয়ার লোক নেই বগুড়ায়।’

জানা গেছে, বগুড়ার জাতীয় সংসদের সাতটি আসনে ক্ষমতাসীন দলের এমপি রয়েছেন মাত্র দুজন। এদের কেউ বগুড়া সদরের এমপি নন। বগুড়া সদরের এমপি বর্তমান জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির। অথচ বগুড়া জেলার প্রাণকেন্দ্রই সদর আসন। আর এ আসনেই নেই সরকারদলীয় এমপি। এর মধ্যে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের এমপি আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান। তিনি আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনের এমপি জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি। এ ছাড়া বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনের এমপি জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার। তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের এমপি মহাজোটের শরিক দল জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন। তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাজী নুরুল আমিন বাচ্চুকে পরাজিত করে এমপি হয়েছেন। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের এমপি আওয়ামী লীগের মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। অন্যদিকে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পার্টির মো. নুরুল ইসলাম ওমর এমপি নির্বাচিত হন। বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনেও জাতীয় পার্টির এমপি। এ আসনে জাতীয় পার্টির (জেপি) এ টি এম আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টুকে পরাজিত করে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলতাফ আলী এমপি নির্বাচিত হন। মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বগুড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোজাম্মেল হক লালু, সাধারণ সম্পাদক আরিফ রেহমান, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রেজাউল হাসান রানু, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আমজাদ হোসেন মিন্টু, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি মির্জা সেলিম রেজা, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মাশরাফি হিরো, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আল রাজী জুয়েল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান শফিক, সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম রাজ প্রমুখ। এ সময় বগুড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোজাম্মের হক লালু বলেন, বগুড়ার উন্নয়নে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। বক্তারা বলেন, বগুড়া সদরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি নেই। এখানে জাতীয় পার্টির এমপি। অথচ জেলার প্রাণকেন্দ্র হলো সদর। এই সদরের এমপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের থাকলে কতই না উন্নয়ন হতো। কিন্তু তা আর হচ্ছে না। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানবন্দর, বগুড়া টু সিরাজগঞ্জ রেলপথ, বগুড়া বিভাগ, বগুড়া সিটি করপোরেশন, একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, একটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ থমকে আছে। একটু সুনজর দিলেই বগুড়ার এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবে রূপ নেবে। আর এসব উন্নয়ন হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের গেটওয়ে খ্যাত বগুড়ার চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর