বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে শিক্ষা কর্মকর্তার ৫০ কোটি টাকার সম্পদ

আয়ের উৎস ফল জালিয়াতি আর বদলি বাণিজ্য

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

বৃত্তি পরীক্ষার ফল জালিয়াতি আর বদলি বাণিজ্য করে ৫০ কোটিরও বেশি টাকার সম্পদ গড়েছেন রাজশাহী জেলার সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে তার এই বিপুল সম্পদের হিসাব পাওয়া গেছে। দুদকের পরিচালক আবদুল আজিজ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে শিগগিরই তারা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন। বৃত্তির ফল জালিয়াতির মামলায় শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম এখন সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আছেন। এ মামলায় তিনি কারাগারেও ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের আরেকটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক। দুদক সূত্র জানায়, আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে শিক্ষক বদলি এবং ডেপুটেশন নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আছে। বৃত্তির ফলাফল জালিয়াতি করে তিনি দুদকের নজরে আসেন। এরপরই বেরিয়ে আসে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের কাহিনী।

আবুল কাশেম রাজশাহী নগরীর মহানন্দা আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের ১১৯ নম্বর প্লটে গড়েছেন ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা আলিশান বাড়ি। নওগাঁর সাপাহারে নিজ এলাকায় কিনেছেন ২০০ বিঘা জমি, নগরীর উপশহর এলাকায় তার নামে কিনেছেন ৪০ লাখ টাকা দিয়ে ৫ কাঠার সরকারি প্লট। নগরীর চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায় স্ত্রীর নামে ৭ কাঠার দুটি সরকারি প্লট নিয়েছেন এক কোটি টাকায়। আবুল কাশেম নিজ নামে এক কোটি টাকার এফডিআর ও ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। স্ত্রী ও ও নিজের নামে কিনেছেন প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের দুটি গাড়ি। এ ছাড়া তিন ব্যাংকের হিসাবে ১৫ কোটি টাকার বেশি গচ্ছিত আছে। দুদকের পরিচালক আবদুল আজিজ ভূঁইয়া জানান, মহানন্দা আবাসিক এলাকায় ১০ তলা বাড়ির নির্মাণকাজের তথ্য গোপনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারিতে আবুল কাশেমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। নিজের নামে প্লট বরাদ্দ নিলেও সে বিষয়টি গোপন করেন তিনি। এ নিয়ে অভিযোগের পর ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত শুনানিকালে তিনি দাবি করেন, প্লটটি তার পিতার নামে। কিন্তু পরবর্তীতে ফের শুনানিতে নিজের নামে প্লট নেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। ওই প্লটে তিনি ১০ তলা বাড়ি নির্মাণকাজ শুরু করলেও সরকারের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেননি। এ ছাড়া অন্য অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া গেছে। মূলত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর বৃত্তি নিয়ে জালিয়াতির ঘটনায় আলোচনায় আসেন শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে ৪০ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল বদলে দেন তিনি। এ নিয়ে দুদক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর তদন্ত করে। তদন্তে জালিয়াতির ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া যায়। গত বছরের ২১ আগস্ট বিকালে রাজশাহী পুলিশ লাইনের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে দুদক রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল। এরপর দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক তরুণ শান্তি ঘোষ বাদী হয়ে নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় কারাগারে থাকার পর এখন জামিনে আছেন আবুল কাশেম।

দুদকের পরিচালক আবদুল আজিজ ভূঁইয়া জানান, আবুল কাশেম মূলত বৃত্তি জালিয়াতি, শিক্ষক বদলি করে এমন বিপুল সম্পদ গড়েছেন। এ ছাড়া দুই ছেলেকে বেসরকারি মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। এসবের সত্যতা পেয়ে তারা অভিযোগপত্র অনুমোদনের জন্য দুদকের কেন্দ্রীয় দফতরে পাঠিয়েছেন। আগামী মাসের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর