সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিক্ষোভ করলেই দাবি পূরণ সম্ভব নয় : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিক্ষোভ করলেই দাবি পূরণ সম্ভব নয় : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাবেশে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ যদি মনে করে সরকারের এটা শেষ বছর, অযৌক্তিক দাবি করলেই আমরা সব শুনে নেব, আমি কিন্তু ক্ষমতার পরোয়া করি না। তিনি বলেন, বিক্ষোভ করলেই সরকারের পক্ষে দাবি পূরণ সম্ভব নয়। কারণ সরকার পরিকল্পনা এবং বাজেট ছাড়া দাবি পূরণ করতে পারে না। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহস্রাধিক কলেজ অধ্যক্ষের অংশগ্রহণে আয়োজিত ‘শিক্ষা সমাবেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসেইন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদও বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ভবন, প্রকল্প ও স্থাপনার উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী কলেজ র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান অর্জনকারী কলেজের অধ্যক্ষদের হাতে সম্মাননা স্মারক, পুরস্কারের চেক এবং বঙ্গবন্ধুর লেখা দুটি বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচা তুলে দেন। রাজশাহী কলেজ, জাতীয় পর্যায়ে প্রথম এবং সরকারি কলেজগুলোর মধ্যেও প্রথম স্থান, জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয়-সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা, জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় কারমাইকেল কলেজ, রংপুর, জাতীয় পর্যায়ে চতুর্থ সরকারি ব্রজমোহন কলেজ বরিশাল এবং জাতীয় পর্যায়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করে সরকারি আযিযুল হক কলেজ, বগুড়া। সিদ্ধেশ্বরী মহিলা কলেজ, ঢাকা, জাতীয় পর্যায়ে সেরা মহিলা কলেজ এবং ঢাকা কমার্স কলেজ জাতীয় পর্যায়ে সেরা বেসরকারি কলেজের পুরস্কার লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথায় কথায় সরকারিকরণ করতে হবে, কোন নীতিমালার ভিত্তিতে করতে হবে, সেটাও তো একটা নীতিমালার ভিত্তিতেই হতে হবে। যখন-তখন যে কেউ দাবি করলে তা তো পূরণ করা সম্ভব নয়। তা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় থাকি, না থাকি আমার কিছু যায় আসে না। এই দেশটা আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, তিনি এই দেশটাকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সেই চিন্তা থেকেই আমার রাজনীতি, সেই চিন্তা থেকেই আমার রাষ্ট্র পরিচালনা। ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে নিজের আখের গোছানো, নিজের ভাগ্য গড়ে তোলা বা নিজের ছেলেমেয়ের ভাগ্য গড়ে তোলা বা নিজের সম্পদ গড়ে তোলা, তা আমাদের নীতি না, আমরা করি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, দিলেই আরও দাও আরও দাও করলে আমরা দিতে অপারগ হব, কারণ আমাদের একটা বাজেট দিয়ে পরিকল্পিতভাবে চলতে হয়। অধ্যক্ষদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকতা একটি মহত পেশা, আপনাদের হাতেই রয়েছে জাতির ভবিষ্যৎ। একজন শিক্ষকের কাছে আমি এটুকুই চাই, আপনারা কতটুকু দিতে পারলেন, করতে পারলেন। কী ধরনের শিক্ষাটা আপনারা দিয়ে যেতে পারলেন যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, দেশকে আরও উন্নত করতে পারবে— সেটাই হচ্ছে বড় কথা। শিক্ষার মান নিয়ে সমালোচনাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও অনেক সময় অনেকে বলেন, শিক্ষা মানসম্মত হচ্ছে না, শিক্ষা মানসম্মত হচ্ছে না। এটা কিন্তু এমন একটা বিষয়... শিক্ষার মানটা আপনি কীভাবে নির্ধারণ করবেন? কারণ, মান উন্নয়ন একটা ধারাবাহিক বিষয়। আজকে যেটা আপনার মনে হবে আধুনিক, কালকে কিন্তু ওটা পুরনো হয়ে যাবে। শিক্ষা যেহেতু একটা ধারাবাহিক বিষয়, কাজেই সময়ের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার বিষয় বাছাই করতে হবে, নির্দিষ্ট করতে হবে এবং শিক্ষা প্রণয়ন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। কারণ আজকে যেটা আমাদের উন্নত বলে মনে হচ্ছে, আধুনিক ও সময়োচিত বলে বিবেচ্য হচ্ছে, দেখা যাবে পাঁচ বছরের মধ্যেই সেটা পুরনো হয়ে গেল। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত গবেষণা হচ্ছে, নতুন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে। এই নতুন নতুন আবিষ্কারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বর্তমান সরকার দেশের বাজেট ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকায় উন্নীত করে দেশকে সাধ্যমতো এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, সবার বেতন-ভাতা অনুদান তাঁর সরকার বাড়িয়ে দিয়েছে, সরকারি-বেসরকারি সব জায়গায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে, কাউকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না। জাতির জনকের স্বপ্ন অনুযায়ী দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তাঁর লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে নিজের বা দলের সম্পদ গড়ে তোলা বা নিজেরা সম্পদশালী হওয়া তাঁর নীতি নয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেদের (তাঁর এবং ছোট বোন শেখ রেহানার) সামান্য সম্পদটুকুও রাষ্ট্রের জন্য ট্রাস্ট করে দান করে দেওয়া এবং তাঁদের সন্তানরা নিজেদের উপার্জিত অর্থ দিয়েই অত্যন্ত কষ্ট করে লেখাপড়া শিখে আজকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি আরও ৩-৪ বছর সময় পেতেন তাহলে দেশ আজ পিছিয়ে থাকত না। শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে বলেন, জিয়াউর রহমান নাকি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু তিনি শুধু স্বাধীনতাবিরোধীদের সুযোগ করে দিতেই সেই ব্যবস্থা শুরু করেন। এখন বহুদলীয় গণতন্ত্র বলতে যদি তারা স্বাধীনতাবিরোধীদের সুযোগ করে দেওয়াকে বোঝান, তাহলে এখানে আমার কিছু বলার নেই। শেখ হাসিনা বলেন, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে বলে দিয়েছি, কোনো সম্পত্তি দিতে পারব না। একটাই সম্পদ, তা হলো তোমাদের লেখাপড়া, শিক্ষা। তার চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছু নয়। কারণ, শিক্ষা এমন একটা সম্পদ, কেউ চুরিও করতে পারবে না, ডাকাতিও করতে পারবে না, ছিনতাইও করতে পারবে না, কেড়ে নিতে পারবে না, তার বিরুদ্ধে মামলাও দিতে পারবে না, কিছুই করতে পারবে না। নিজের এবং বোন শেখ রেহানার সন্তানদের বিষয়টি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, গর্বের সঙ্গে এটুকু বলতে পারি বিশ্বের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আর রেহানার ছেলেমেয়েরা পড়েছে। নিজের দুই সন্তান ও তিন ভাগ্নে, ভাগ্নির বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ কীভাবে জোগাড় হয়েছে, তাও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমরা হয়তো সেভাবে সাহায্য করতে পারিনি, তারা চাকরি করেছে, পড়েছে আবার গ্যাপ দিয়েছে কিছু দিন, আবার চাকরি করেছে, লোন নিয়ে পড়াশোনা করেছে, আবার চাকরি করে তা পরিশোধ করেছে, আবার পড়েছে— এভাবেই তারা নিজেদের গড়ে তুলেছে। আমার বাবার বন্ধুবান্ধব কিছু সাহায্য করেছিলেন প্রাথমিকভাবে, সে জন্যই আমরা তাদের শিক্ষা দিতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি নিজেদের জন্য না রেখে জনকল্যাণে দেওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক নেতার ছেলেমেয়ের মধ্যে আমরা দুই বোনই যে সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি, ওই ধানমন্ডির বাড়ি, সেটা আমরা জনগণকে দান করে দিয়েছি। আমরা ট্রাস্ট ফান্ড করে এই দেশের ছেলেমেয়ে, তাদের শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করতে তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর