সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কলকাতা বইমেলার আলোচনায়ও তিস্তার পানি প্রসঙ্গ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

একই মঞ্চে উপস্থিত বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের তিনজন মন্ত্রী, সচিব, এমপি, সাহিত্যিক। বই কেন্দ্রিক আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারিত থাকলেও মাঝে মধ্যেই সেখানে চলে এলো তিস্তার পানি। বাধা-বিপত্তি সরিয়ে তিস্তার পানি সমস্যা মেটানোর ওপর জোর দিলেন বক্তারা।

উপলক্ষ ৪২তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় ‘বাংলাদেশ দিবস’ উদযাপন অনুষ্ঠান। সে কারণে শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্ক’ এর এস বি আই অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিল ‘বাংলাদেশের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক একটি সেমিনার। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। সম্মানিত অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এ ছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশের নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির     সদস্য পঙ্কজ নাথ এমপিসহ বিশিষ্টরা। শুরুটা করেছিলেন পঙ্কজ নাথ। বক্তব্য রাখতে উঠে বই, বাংলা সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি তিস্তা প্রসঙ্গটি তুলে আনেন তিনি। পঙ্কজ বলেন, ‘সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতির কারণেই ভারতের সেভেন সিস্টারে অস্ত্রের ঝনঝনানি, বিচ্ছিন্নতাবাদ বন্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ত্রিপুরার পালাটানায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ভারী শিল্পের পরিবহনের অনুমতি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আমরা ত্রিপুরা ও ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই পালাটানা থেকে আমাদেরকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। ঠিক এভাবেই তিস্তার পানি সংকটও মেটানো উচিত। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মন্ত্রীদের উদ্দেশ করে পঙ্কজ নাথ বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এখানে আছেন, বাংলাদেশের মন্ত্রীও এখানে আছেন- বাংলাদেশের প্রগতিশীল শক্তি, গণতান্ত্রিকভাবে উত্তরণের পথে তিস্তার পানি সমস্যা যেন বাধা না-সেটা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি’। পঙ্কজের পরই বক্তব্য রাখতে ওঠেন আফরোজ চুমকি। তাঁর ভাষণেও উঠে আসে তিস্তাসহ বকেয়া সমস্যা সমাধানের বিষয়টি। নারী ও শিশু বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লিগের সরকারের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি হয়েছে। এই সরকারের আমলেই দীর্ঘদিনের ছিটমহল সমস্যা মিটেছে, সাগরের সমস্যা ছিল-আমরা দুই রাষ্ট্র মিলে আইনগতভাবে সাগরের সেই সমস্যাও মিটিয়েছি। সামনে আরও কিছু ছোট খাটো সমস্যা রয়েছে সেটাও মেটাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় দিদি মমতা ব্যানার্জির সহযোগিতা করবেন’। মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘ভারত আমাদের বড় প্রতিবেশী দেশ এবং অকৃত্তিম বন্ধু ও প্রমাণিত বন্ধু। কিছু সমস্যা আছে প্রতিবেশী দুই বাড়ি পাশাপাশি থাকলে সেখানে সমস্যা থাকে, কিন্তু সমস্যা থাকলেও আমরা আলোচনা করে তা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি তার প্রমাণ আমরা দেখেছি। ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে, তারও আগে গঙ্গার পানি চুক্তি হয়েছে। তিস্তাসহ যেসব সমস্যা রয়ে গেছে সেগুলো মনে করি সমাধান যোগ্য এবং আজ হোক,কাল হোক এর সমাধান হবে।

বইমেলার আলোচনা থেকে তিসত্মার মতো একটি স্পর্শকাতর ইস্যুটি উঠে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যান পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী। সেমিনার শেষে মঞ্চ থেকে নামতেই গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রশ্নও ছিল সেই ‘তিস্তা’ ইস্যু। ‘ইলিশ তো এলো, পানি কি যাবে’? এই প্রশ্নের উত্তরে হাসতে হাসতেই মন্ত্রীর ডিপ্লোমেটিক জবাব ‘আমি ওই বিষয়টিতে বলার জায়গায় নেই। এটা কেবলমাত্র মুখ্যমন্ত্রীই বলতে পারেন’। যদিও তিনি জানান ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে, বাংলাদেশের সাথে ভারত সরকারের আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছে। নিশ্চয়ই আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও মতামত নেবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর